যানজটের সুযোগ নেয় ‘ঝটিকা ডাকাতদল’

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

মাহবুব পলাশ, মীরসরাই | শনিবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:৩০ পূর্বাহ্ণ

ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলার মধ্যবর্তী কিছু অংশে বেড়েছে ডাকাত দলের উৎপাত। বিশেষ করে দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী বড় দারোগার হাট স্কেলকে কেন্দ্র করে রাতের বেলায় সৃষ্ট যানজটের ভেতর বিভিন্ন গাড়িতে প্রায়শই হানা দেয় ঝটিকা ডাকাতদল। সম্প্রতি এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকটি। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বেড়েছে উৎকন্ঠা। পুলিশ প্রশাসন বলছে, এই অঞ্চলে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে, তবে কয়েকটি পয়েন্টে দ্রুত সিসিটিভি বসানো জরুরি। সম্প্রতি ডাকাতের কবলে পড়া মীরসরাই সদরের সেবা আধুনিক হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রহমান ঈশান বলেন, গত বুধবার রাতে চট্টগ্রাম শহর থেকে মীরসরাইয়ে আসার পথে বড়দারোগারহাট স্কেলে সৃষ্ট যানজটের টেরিয়াইল অংশে আটকে থাকা অবস্থায় তিনি আক্রান্ত হন ডাকাতদলের হাতে। রাত ১২টার দিকে যানজটের মধ্যে নিজের প্রাইভেট কার চালক ও একজন টেকনেশিয়ানের সঙ্গে বসেছিলেন তিনি। অতর্কিত ডাকাতদল হানা দিয়ে গাড়ির দরজা খোলার চেষ্টা করে আগে। তিনি দরজা না খুললে ডাকাতদল দেশিবিদেশি কুড়াল, কিরিছসহ নানা অস্ত্র নিয়ে প্রাইভেটকারের পাশের ও পেছনের গ্লাস ভেঙে ড্রাইভারের মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। এসময় জ্যাম একটু হালকা হওয়ায় চালক গাড়ি টেনে দ্রুত সরে না আসলে আরও বড় বিপদ হতে পারত। অপর এক সূত্রে জানা যায়, উক্ত ডাকাতদল একই সময়ে একের পর এক আরো কয়েকটি প্রাইভেট গাড়িতে একইভাবে হানা দিয়ে মোবাইল, টাকা ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়।

আরেক ভুক্তভোগী কমফোর্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজাম উদ্দিন বলেন, প্রায়ই মুমূর্ষু রোগী নিয়ে দিবারাত্রী যেকোনো সময় আমাদের চট্টগ্রাম যেতে হয়। রোগী ও তাদের স্বজনরাও রেহাই পাচ্ছে না এসব ডাকাতদলের কবল থেকে। আবার আমরা নিজেরাও আক্রান্ত হচ্ছি। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মীরসরাই উপজেলা শাখার সভাপতি নয়ন কান্তি ধূম বলেন, কয়েকদিন পূর্বে উক্ত স্কেলের জ্যামে পড়ে আমিও ডাকাতদলের আক্রমণের শিকার হই।

জানা গেছে, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গও রেহাই পাচ্ছে না উক্ত ডাকাতদলের কবল থেকে। আগে মহাসড়কের নয়দুয়ারিয়া, কমলদহ, সোনাপাহাড় এলাকায় বিভিন্ন সময় গাড়িতে লোহা নিক্ষেপ করে বা পাশের ঝোঁপঝাড় থেকে হঠাৎ বেরিয়ে গাড়ি থামিয়ে ডাকাতি করত। বর্তমানে রাত ১০টার পর বড় দারোগারহাট স্কেলের জ্যামের কারণে গাড়িতে আটকে থাকা যাত্রীরা সবসময় আতংকে থাকেন কখন ডাকাতদল তাদের উপর হামলে পড়ে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়।

এই বিষয়ে মীরসরাই থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কের বড় দারোগারহাটের উক্ত স্কেল এলাকা আমার অধীনস্থ এলাকা নয়, তবু এসব ঘটনা জানার পর আমরাও সেখানে টহল জোরদার করেছি।

উক্ত এলাকার হাইওয়ে তদারকি বিভাগ কুমিরা হাইওয়ের ওসি আব্দুল হাকীম আজাদ বলেন, রাতে আমাদের টহল টিম এমনিতেই কিছুক্ষণ পর পর টহল দিয়ে থাকে। উক্ত ঘটনার পর আমরা আরো টহল জোরদার করেছি। মীরসরাই সার্কেল এর এএসপি মনিরুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোর বিষয়ে আমি চট্টগ্রামের আইনশৃক্সখলা সভায়সহ বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করেছি। এই বিষয়ে শীঘ্রই বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে। তিনি মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ কিছু অংশ শীঘ্রই সিসিটিভির আওতায় আনা জরুরি বলেও মতামত ব্যক্ত করেন।

এদিকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কে ৪৯০টি জায়গায় ১৪২৭টি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান ইতিমধ্যে জানিয়েছেন দুয়েক মাসের মধ্যে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। গত বুধবার হাইওয়ে পুলিশের সদরদপ্তরে গণমাধ্যমকর্মীদের এ কথা জানান পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমদ্যপের দায়ের কোপে মারা গেলেন বৃদ্ধ
পরবর্তী নিবন্ধবন্দর এলাকায় দেড় কোটি টাকার চোরাই কাপড়ের রোল জব্দ, আটক ২