যতবার ক্ষমতায় এসেছি, ভোটেই এসেছি : প্রধানমন্ত্রী

সব ব্যাংকেই টাকা আছে

| বুধবার , ৭ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ

নির্বাচন ভিন্ন অন্য কোনো পথ আওয়ামী লীগ খোঁজে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ সব সময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। যতবার ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভোট নিয়েই সরকারে এসেছে। দেশের ব্যাংকগুলোতে টাকা না থাকার গুজব ছড়িয়ে একটি শ্রেণি মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে মন্তব্য করে সেই গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের সম্মেলনে একথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে একটিবারই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকারে এসে ২০০১ সালে ৫ বছর সম্পন্ন হওয়ার পর শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। আর কোনোদিন বাংলাদেশে ক্ষমতার পরিবর্তন শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে কি না- সেই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে। সেজন্যই আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা দিয়ে এসেছিল। খবর বিডিনিউজের।

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আর খালেদা জিয়া বিনিময়ে কী করেছিল? ১৯৯১ সালে জামাতের সাথে হাত মিলিয়ে সরকার গঠন করল। যখন ১৯৯৬ সালে ইলেকশন, সেই ইলেকশনে জনগণের ভোট চুরি করল। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর খালেদা জিয়ার পদত্যাগের বাধ্য হওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এটা বিএনপির মনে রাখা দরকার যে জনগণের ভোট চুরি করলে জনগণ ছেড়ে দেয় না। জনগণ জানে কীভাবে সেই সরকার উৎখাত করতে হবে। আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, আমরা ভোট চুরি করতে যাব কেন? জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের ভোট দেয়। ভোটে বিএনপির হারের জন্য তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে দায়ী করেন শেখ হাসিনা। ২০১৮- এর ইলেকশন, এক সিটে যদি তিনজন করে নমিনেশন দেয়… এখানে ফখরুল একজনকে নমিনেশন দেয়, রিজভী আরেকজনকে দেয়, আর লন্ডন থেকে তারেক দেয় আরেকজনকে। যে যত টাকা পায়, সে ততটা নমিনেশন দেয়। সেখানে হল টাকার খেলা। বিএনপির দুই নেতার কাছ থেকে এমন নালিশও পেয়েছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের দেশের যারা ইন্টেলেকচুয়াল, অনেকে হয়ত ভুলেই গেছেন এই কথাগুলো লিখতে। সকালে একজনের নাম যায়, দুপুরে আরেকটা নাম যায়, বিকালে আরেকটা নাম যায়। এইভাবে হল তাদের ইলেকশন। ওইভাবে নির্বাচন করে জেতা যায় না।

বিএনপি গঠনের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, তাদের জন্মই হয়নি গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে। জন্ম হয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমানের পকেট থেকে। ক্যান্টনমেন্টে বসে গোয়েন্দাদের সহায়তায় এই দলের গঠন। জিয়াউর রহমানের আমলে নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ভোট চুরি, ভোট কারচুপি, এই কালচার কে নিয়ে এসেছে? এটা তো জিয়াউর রহমান শুরু করেছে। হ্যাঁ-না ভোট। না- এর বাঙ পাওয়াই যায়নি, খালি হ্যাঁ এর বাঙ। এই তাদের ইলেকশনের চেহারা।

দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার দণ্ডের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের অনেক জ্ঞানী-গুণী দেখি বিএনপির সাথে হাত মেলায়, অনেক তত্ত্ব কথা শোনায়, গণতন্ত্রের সবক দেয়, গণতন্ত্র উদ্ধার করতে চায়। আমার সেই… আমাদের ওই যে বুদ্ধিজীবী… এরা বুদ্ধিজীবী নিজেদেরকে অনেকে বলে, আমি বলি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিজীবী। তারা আসলে বুদ্ধিজীবী না। সরকার প্রধান বলেন, আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে, এই সমস্ত দুর্বৃত্তায়ন যারা করেছে, তাদের সাথে হাত মিলিয়ে জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়ার এই প্রচেষ্টা কেন? আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী? তিনি বলেন, সরকার গঠনের পর থেকে প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছি আমরা জনগণের জন্য। বাংলাদেশে নাকি কিছুই হয়নি। বাংলাদেশ নাকি শেষ হয়ে যাচ্ছে। শেষ হয়ে কারা যাচ্ছে সেটা হলো প্রশ্ন। যে বাংলাদেশে ১৯৯৬ সালে আমি ক্ষমতায় এসে দেখি মাত্র ৪৩/৪৫ ভাগ স্বাক্ষরতার হার। আমরা ৬৫ ভাগে উন্নীত করেছি। ২০০৯-এ এসে দেখি সেই ৬৫ ভাগ আর নাই। আবার কমে গেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যারা এদেশে স্বাধীনতাই চায়নি, যারা ওই স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ে ঘর করে এবং তাদেরকে ক্ষমতায় বসাবার… তাদেরকে নিয়ে দল করে তারা তো এদেশের উন্নয়নটা কখনও মেনে নেবে না। চোখেও দেখে না। মানুষ সামনের দিকে এগোয়। আর বিএনপি ক্ষমতায় আসলে দেশ পেছনে যায়। ওই যে আমি বলি না ভূতের পা পেছন দিকে। ওরাও বোধহয় ভূতের রূপ নিয়েই আসে আমাদের দেশে।

টাকা আছে সব ব্যাংকেই : প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কিছু গুজব ছড়াচ্ছে। কী? ব্যাংকে টাকা নেই। টাকা নেই বলে অনেকে টাকা তুলে ঘরে নিয়ে যাচ্ছে। আমি আগেও বক্তৃতায় বলেছি, এখনো বলি যে এদের কি চোরের সাথে কোনো সখ্যতা আছে কিনা যে ব্যাংকের থেকে টাকা নিয়ে ঘরে রাখে চোরের পোয়াবারো। চোর চুরি করে খেতে পারবে, সেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছে নাকি কেউ কেউ, আমি জানি না।

দেশের ব্যাংকগুলোতে কোনো সমস্যা নেই দাবি করে তিনি বলেন, আমি একটা কথা স্পষ্ট জানাতে চাই- আমি গতকালকে রাতে আমাদের যেমন এসডিজি এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে… সেই মিটিং করেছি। এরপরে আমি আবার অর্থ সচিব এবং আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সাথে আমি কথা বলেছি। আজকে সকালে আমি অর্থমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করেছি। আল্লাহর রহমতে আমাদের কোনো সমস্যা নাই। প্রতি ব্যাংকেই টাকা আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘গ্লোবাল অ্যাম্বাসেডর ফর ডায়াবেটিস’ হলেন প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ‘উন্নয়ন মহাযজ্ঞ’