যক্ষ্মা বা যক্ষ্মা একটি পুরনো ফুসফুসীয় ব্যাধি। সারাবিশ্বের দশটি মৃত্যুজনিত কারণের মধ্যে যক্ষ্মা একটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, প্রতিদিন বিশ্বে ৪ হাজার মানুষ যক্ষা রোগে মারা যান এবং ৩০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হন। সংক্রামক এবং প্রাণঘাতী এই রোগটি আমাদের দেশে এখন একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থানই যক্ষ্মার অন্যতম কারণ। কেননা, দারিদ্র্যের সঙ্গে যক্ষার একটা ঘনিষ্ঠতা তো রয়েছেই। ২০১৬ সাল থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে সারাবিশ্ব থেকে যক্ষা নির্মূলের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যক্ষ্মা নির্মূল কতটা সহজ হবে? এই প্রেক্ষিতে উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশ ও হাত গুটিয়ে বসে নেই। বর্তমানে দেশে ১ হাজার ৩০০ ল্যাবরেটরিতে বিনামূল্যে যক্ষ্মার স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। তাছাড়া যক্ষ্মা বিষয়ক সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনার্থে, দেশে স্বাধীনতার পর থেকে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী হাতে নেওয়া হয়েছে। যা যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে নীরব ভূমিকা রাখছে। নিয়মিত ওষুধ সেবন যেখানে যক্ষা নির্মূলের প্রধান শর্ত, সেখানে সারাদেশে বর্তমানে ডটস সেন্টারে বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে যক্ষ্মার টিকাকে ইপিআই এর অন্তর্ভুক্ত করে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একসময়ের ‘যক্ষা হলে রক্ষা নাই’ কথাটি ঘুরিয়ে আজ একবিংশ শতাব্দীতে এসে বলতে হয় ‘যক্ষ্মা ভালো হয়’। বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তিতে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে যক্ষ্মার সাথে লড়তে শিখেছে মানুষ। তবে এখন করোনা সুরক্ষার সঙ্গে যক্ষ্মা থেকে সুরক্ষার ব্যাপারেও সতর্ক হতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রতি বছর ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালন করা হয়। যক্ষ্মা রোগের জীবাণু যেহেতু কাশির মাধ্যমে ছড়ায় তাই মাস্ক ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। জন্মের পর পর প্রত্যেক শিশুকে সম্পূর্ণরূপে বিসিজি টিকা দিতে হবে। যত্রতত্র থুতু না ফেলা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশের ব্যাপারে ন্যায়সঙ্গত, অধিকার ভিত্তিক যক্ষ্মা প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরিতে স্বাস্থ্য দফতরকে জোর দিতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে করোনার পাশাপাশি যক্ষা মোকাবেলায় নতুন চ্যালেঞ্জ নিলে তবেই যক্ষ্মা নির্মূলে বাংলাদেশ শতভাগ সফল হবে। ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়বে আজ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসে এটাই আমাদের সবার প্রত্যাশা।