মৌলিক প্রশ্নে দলমত নির্বিশেষে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণে রাষ্ট্রপতির আহ্বান

| বুধবার , ১৯ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ

গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও উন্নয়নের মতো মৌলিক প্রশ্নে দলমত ও শ্রেণিপেশা নির্বিশেষে আপামর জনগণকে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে দেশের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করারও আহ্বান জানান তিনি। গত রবিবার একাদশ জাতীয় সংসদের ষোড়শ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।
ধর্মের নামে কোনো গোষ্ঠী যাতে দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে না পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর নীতির কারণে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, যা উন্নয়নের পূর্বশর্ত। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বিশ্বের জন্য একটি অনন্য উদাহরণ। দেশের সব সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে সম্প্রীতি সহকারে স্ব-স্ব ধর্ম চর্চা করতে পারে, সে বিষয়ে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানসহ সব সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব উৎসবমুখর পরিবেশে ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, তথাপি ধর্মের নামে কোনো ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী যাতে দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে না পারে, সেদিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সরকার ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতিতে অটল থাকলেও তা বাস্তবায়নে আইন প্রয়োগ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতার ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলেন, ঘাটতি পূরণ ছাড়া অসাম্প্রদায়িক কোনো কর্ম কখনোই সুসম্পাদিত হবে না। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সংযোগ বাড়াতে হবে, বিশেষ করে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতা নিতে হবে। তবে মূল ভূমিকা নিতে হবে পরিবার ও সমাজকে। কেননা পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অভাব থেকেই সৃষ্টি হয় সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ। তবে তাদের মতে, মূল ভূমিকার জায়গা হতে হবে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন, যা না হলে বাকি সব চেষ্টাই ব্যর্থ হবে।
এ কথা সত্যি যে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল ও অকার্যকর করার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে ষড়যন্ত্রকারীরা অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর এক লেখায় বলেছেন, বাংলাদেশে তৎপর সব জঙ্গিগোষ্ঠীই দেশের অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসবাদী। তারা কখনো জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), কখনো হরকাতুল জিহাদ, কখনো আল্লাহর দল ইত্যাদি নাম ধারণ করেছে। ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারি, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান, সিলেটের আতিয়া মহলসহ বিভিন্ন জায়গায় তারা সন্ত্রাসবাদী হামলা চালিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে তাদের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ জঙ্গিদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। মা তাঁর জঙ্গি ছেলেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছেন। আত্মীয়-স্বজন জঙ্গিদের মৃতদেহ নিতে পর্যন্ত আসেনি। আমাদের দেশের মানুষ ধর্মভীরু, কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। এই সত্য বারবার প্রমাণিত হয়েছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সশস্ত্র জঙ্গিবাদের উত্থানের সর্ববৃহৎ আলামত দৃশ্যমান হয় ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জেএমবির ৬১টি জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে। জঙ্গিদের মদদ দেওয়ার কাজে রাষ্ট্রীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করারও অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। কিন্তু সফল রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে আমরা উল্টো চিত্র দেখি। তিনি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে সন্ত্রাস ও জঙ্গি তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বে অভূতপূর্ব নিদর্শন সৃষ্টি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর অসামপ্রদায়িক আদর্শে বিশ্বাস এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়, সুদক্ষ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের গুণে বাংলাদেশ আজ সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। তবে সামপ্রতিক সময়ে কোথাও কোথাও পরিবেশ অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র চলেছে। কোথাও ধর্মীয় গোষ্ঠীর পরিচয়ে, কোথাও জাতি-শ্রেষ্ঠত্বের নামে হামলা হয়েছে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী তৎপরতা অনেক দিন ধরেই চলছে। এখন চলছে ভেতরে ভেতরে। গত কয়েক বছরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে শঙ্কা অনেকটা কমলেও ঝুঁকিমুক্ত হয়নি দেশ। সামপ্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে এ আশঙ্কা বেড়েছে। তাই সরকার, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা-সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, দেশের অগ্রগতির সকল চাবিকাঠি হলো স্থিতিশীল পরিবেশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে