মৌলভীবাজারের ৩ রাজাকারের প্রাণদণ্ড

| শুক্রবার , ২০ মে, ২০২২ at ৮:২২ পূর্বাহ্ণ

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণের মত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৌলভীবাজারের বড়লেখার দুই ভাইসহ তিনজনের ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত। দণ্ডিত তিন যুদ্ধাপরাধী হলেন আব্দুল মান্নান ওরফে মনাই, আব্দুল আজিজ ওরফে হাবুল এবং তার ভাই আব্দুল মতিন। তাদের মধ্যে আব্দুল মতিন পলাতক; বাকি দুজন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। খবর বিডিনিউজের।
বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গতকাল বৃহস্পতিবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। এ ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার এবং কে এম হাফিজুল আলম।
সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ২৪০ পৃষ্ঠার এ রায়ের সারসংক্ষেপ পড়ে শোনান তিন বিচারক। যুদ্ধাপরাধের পাঁচ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তিন আসামির সবার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
এর মধ্যে আজিজ ও মতিনকে দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, অন্য দুটি অভিযোগে তাদের মোট ৩০ বছর করে কারাদণ্ড হয়েছে। আর মান্নানকে এক অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং আরেক অভিযোগে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে রায়ে।
যে অভিযোগে যে সাজা : প্রথম অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১৯ মে আসামিরা মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানার ঘোলসা গ্রাম থেকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) নেতা হরেন্দ্রলাল দাস ওরফে হরিদাসসহ মতিলাল দাস, নগেন্দ্র কুমার দাস এবং শ্রীনিবাস দাসকে অপহরণ করেন। তিন দিন বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে আটক রেখে নির্যাতনের পর জুরি বাজার বধ্যভূমিতে নিয়ে হরেন্দ্রলাল দাস ওরফে হরিদাসসহ মতিলাল দাস, নগেন্দ্র কুমার দাসকে হত্যা করে। শ্রীনিবাস দাস কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে যান এবং দুদিন পর বাড়ি ফিরে আসেন।
দণ্ড : এ অভিযোগে আসামি আব্দুল মান্নান মনাইকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় অভিযোগ : ১৯৭১ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে আসামিরা বড়লেখা থানার বিওসি কেছরিগুল গ্রাম থেকে সাফিয়া খাতুন ও আবদুল খালেককে অপহরণ করে কেরামত নগর টি-গার্ডেন রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে আসামিরা সাফিয়া খাতুনকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে শাহবাজপুর রাজাকার ক্যাম্প ও বড়লেখা সিও অফিসে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়েও সাফিয়া খাতুনকে ধর্ষণ করা হয়। ৬ ডিসেম্বর বড়লেখা হানাদারমুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধারা সাফিয়া খাতুনকে সিও অফিসের বাংকার থেকে উদ্ধার করে।
দণ্ড : এ অভিযোগে দুই ভাই আব্দুল আজিজ ওরফে হাবুল ও আব্দুল মতিনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তৃতীয় অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর আসামিরা বড়লেখা থানার পাখিয়ালা গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা মঈন কমান্ডারের বাড়িতে হামলা করে এবং লুটপাট চালায়। রাজাকারা মঈনের বাবা বছির উদ্দিন, নেছার আলী, ভাই আইয়ুব আলী ও ভাতিজা হারিছ আলীকে অপহরণ করে বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে আটক রেখে নির্যাতন করে। ৬ ডিসেম্বর বড়লেখা হানাদারমুক্ত হলে তারা মুক্তি পান।
দণ্ড : এ অভিযোগে আব্দুল আজিজ ওরফে হাবুল এবং আব্দুল মতিনকে ১৫ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
চতুর্থ অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর আসামিরা বড়লেখা থানার হিনাই নগর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা মস্তকিন কমান্ডারের বাড়িতে হামলা করে। মস্তকিনকে না পেয়ে তার ভাই মতছিন আলীকে অপহরণ করে বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে তারা। নির্যাতনের ফলে মতছিন আলীর পা ভেঙে যায়। আসামিরা মস্তকিন ও মতছিন আলীর বাড়ির মালামাল লুট করে তিনটি টিনের ঘর পুড়িয়ে দেয়।
দণ্ড : এ অভিযোগে তিন আসামির সবাইকে ১৫ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
পঞ্চম অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ১৭ নভেম্বর আসামিরা বড়লেখা থানার ডিমাই বাজার থেকে মুক্তিযোদ্ধা মনির আলীকে আটক করে। তাকে সঙ্গে নিয়ে তার ভাই মুক্তিযোদ্ধা হাবিব কমান্ডারকে আটক করার জন্য বাড়িতে হামলা করে তারা। সেখান থেকে আসামিরা মনির আলী ও তার স্ত্রী আফিয়া বেগমকে অপহরণ করে কেরামত নগর টি-গার্ডেন রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ক্যাম্পে আসামিরা আফিয়া বেগমকে ধর্ষণ করে। হাবিব কমান্ডার ও মনির আলীর বাড়ির মালামালও লুটপাট করা হয়।
দণ্ড : এই অভিযোগে দুই ভাই আব্দুল আজিজ ওরফে হাবুল ও আব্দুল মতিনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপি কে হালদারকে ফেরানোর বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা
পরবর্তী নিবন্ধকুমিরায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু