মেঠোপথ পেরিয়ে যতদূর চোখ যায়, চারদিকে সবুজ আর সবুজ, মাথার ওপর বিশাল আকাশ, তার নিচে কেওড়া বন। খানিক দূরেই সমুদ্রের বিশাল জলরাশি। হৃদয় হরণ করা এমন রূপ বারবার হাতছানি দেয় সীতাকুণ্ডের অনিন্দ্যসুন্দর গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকত।
সীতাকুণ্ড বাজার থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় দীর্ঘ যানজট পেরিয়ে সৈকতের পাশে বেড়িবাঁধের ওপর দাঁড়াতেই চোখ পড়বে কেওড়া বনের উপরে শীতের মায়াবি আকাশ। বেড়িবাঁধ পেরিয়ে জুতো হাতে নিয়ে কাদা মাটির উপর দিয়ে কিছুটা পথ হাঁটার পর কানে ভেসে আসছিল সমুদ্রের গর্জন। সৈকতে যাওয়ার পথে কেওড়া বনে ঘাসের বিছানা আর ঝিরিঝিরি বাতাস এক অন্যরকম অনুভূতি। সাগরের জলে পা ভেজাতে সৈকতের দিকে এগোতেই দর্শনার্থীদের কোলাহল। দলবল নিয়ে কেউ ফুটবল খেলছে, কেউ গা ভেজাচ্ছে, অনেকেই আবার ব্যস্ত ছবি তুলতে। সৈকতের এক পাশেই বয়ে যাওয়া খাল। সেই খালে নৌকা নিয়ে গোধূলিবেলায় ভাটার অপেক্ষায় মাঝি। সমুদ্রের জলে সূর্যের রক্তিম আভা। জল আর আকাশ মিলেছে সোনালি রঙের ক্যানভাসে।
কক্সবাজার, কুয়াকাটা বা পতেঙ্গার মতো বেশ পরিচিত না হলেও সামপ্রতিক সময়ে গুলিয়াখালী সৈকতে ব্যাপক হারে আনাগোনা বাড়ছে পর্যটকদের। সৈকতটির জীবপ্রকৃতির বৈচিত্র্যময় অনিন্দ্যরূপই এর কারণ। চারদিকে সবুজ আর সবুজ, মাথার ওপর বিশাল আকাশ, মাটিতে একপাশে কেওড়া বন, তার মাঝ দিয়ে খাল, খালের এদিক-ওদিক চারদিকে ছড়িয়ে আছে কেওড়ার শ্বাসমূল, অনেকটা ম্যানগ্রোভ বনের মতো। আর সামনে বিশাল জলরাশি। বছরের অন্য সময় বেশ নিরিবিলি স্থানটিতে এখন হাজারো প্রাণের কোলাহল। সমুদ্র সৈকত আর চারপাশের মোহনীয় রূপ টানছে দর্শনার্থীদের।
দিনে দিনে পরিচিতি লাভ করায় এ সৈকতে দর্শনার্থীদের ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু চোখে পড়ছে না অবকাঠামোগত কোন উন্নয়ন কার্যক্রম, বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থায়। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে সৈকতের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। সাধারণত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় এ পথে সময় লাগে ১৫-২০ মিনিট। তবে রাস্তা এতো সরু যে, একটি মাইক্রোবাস ও একটি সিএনজি একসঙ্গে ক্রস করতে পারে না। এজন্য দর্শনার্থীদের পাশাপাশি ভুগতে হয় স্থানীয়দেরও। সরু রাস্তাটির কিছু অংশ ইট আর বিটুমিনের হলেও কিছু অংশ এখনও কাঁচা।
গুলিয়াখালীতে পর্যটকের আনাগোনা বাড়লেও নিরাপত্তার জন্য দেখা যায় না কোনো তৎপরতা। তাছাড়া সৈকতেও কোনো ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেই। যদিও এ ধরনের নবপরিচিত সৈকতে চোরাবালিসহ নানা শঙ্কা থেকে যায়। তাই নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়ে থাকতে হয় দর্শনার্থীদের।
দর্শনার্থীরা বলেন, যোগাযোগ, আবাসিক ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হলে সমুদ্র সৈকতটি দেশের পর্যটন শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
চাঁদপুর থেকে আসা দর্শনার্থী সোহেল জানান, সমুদ্র সৈকত আরো অনেক দেখেছি, এমন ভিন্ন আবহের সৈকত আর দেখিনি। সত্যিই ভিন্ন রকম সৌন্দর্য রয়েছে এখানে। দর্শনার্থী রুবেল জানান, সবুজের মধ্যে অথৈ জল, কেওড়া বন। কিছুটা সুন্দর বনের আবহ রয়েছে এখানে।
উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন বলেন, গুলিয়াখালীকে সরকার এখনও সৈকত হিসেবে ঘোষণা দেয়নি। তাই এখানে কোনো অবকাঠামো তৈরি হয়নি। এখানে আলাদাভাবে কিছু করার সুযোগ নেই উপজেলা পরিষদের।
যেভাবে যেতে হয় : স্থানীয়রা গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতকে মুরাদপুর বিচ নামে চেনেন। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাসে উঠে নামতে হবে সীতাকুণ্ড বাজারে। সেখান থেকে সিএনজি, অটোরিকশা নিয়ে যাওয়া যাবে গুলিয়াখালি সৈকতে। ভাড়া লাগবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। সৈকতে কোনো গাড়ির স্ট্যান্ড নেই। তাই আগেই ফেরার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে নেয়া ভালো।
থাকা ও খাওয়া : গুলিয়াখালী সৈকতের আশপাশে থাকা ও খাওয়ার কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই। খেতে হলে সীতাকুণ্ড বাজারে যেতে হবে। বাজারে মোটামুটি সব ধরনের খাবার পাওয়া যায়।