ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু নরেন্দ্র মোদিকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানানোয় তিনি আজ রোববার সন্ধ্যায় টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন।
ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) প্রধান জে পি নাড্ডা মোদিকে বিজেপি পার্লামেন্টারি দলের নেতা হিসাবে তাকে নির্বাচনের বিষয়ে একটি চিঠি হস্তান্তর এবং এনডিএ নেতারা মোদিকে তাদের সমর্থন জানিয়ে চিঠি জমা দেওয়ার পর মুর্মু গত শুক্রবার মোদিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করে নিয়োগ প্রদান করেন। খবর বাসসের।
সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ২৪০টি আসন জিতেছে। তবে তাদের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) মিলে একত্রে ২৯৩টি আসন পেয়েছে, এতে জোটটির একটি ভালো সুবিধাজনক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে।
রাষ্ট্রপতি ভবনের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ভারতের সংবিধানের ৭৫(১) অনুচ্ছেদের আওতায় তার ওপর অর্পিত ক্ষমতা বলে নরেন্দ্র মোদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ভবনে রোববার (আজ) সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদের অন্যান্য সদস্যদের দপ্তর ও গোপনীয়তার শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি। এছাড়া ভারতে লোকসভায় আগের দুই মেয়াদে বিরোধী দলীয় নেতা না থাকার শূন্যতা এবার কাটছে; বিরোধী দলীয় নেতা হতে চলেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। গতকাল শনিবার বিরোধী দলটির সর্বোচ্চ নির্বাহী ফোরাম ‘কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি’ (সিডব্লিউসি) সর্বসম্মতভাবে রাহুলকে বিরোধী দলীয় নেতা করতে প্রস্তাব পাস করেছে। রাহুল এ দায়িত্ব নিতে রাজি হলে এক দশক পর লোকসভায় বিরোধী দলীয় নেতা হবেন তিনি।
এদিকে বিডিনিউজ এক প্রতিবেদনে জানায়, টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের সরকারপ্রধান হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের সব আয়োজন গুছিয়ে আনা হয়েছে। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এরই মধ্যে দিল্লিতে পৌঁছেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিসহ অনুষ্ঠানে ৭ বিদেশি নেতা যোগ দেবেন। আর সবমিলিয়ে এই শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা হবে আট হাজার। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান নিশ্ছিদ্র করতে এরই মধ্যে রাজধানীতে দিল্লিতে জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ সতকর্তা।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান চলার সময় যেকোনো অপরাধমূলক বা সন্ত্রাসী হুমকি রোধ করতে দিল্লিতে নো–ফ্লাই জোন ঘোষণা করা হয়েছে। এই বিধিনিষেধ ৯ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। বিদেশি অতিথিদের হোটেলে বিশেষ প্রোটোকলসহ বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। বিশেষ নিরাপত্তার আওতায় রয়েছে লীলা, তাজ, আইটিসি মৌর্য, ক্ল্যারিজেস এবং ওবেরয়ের মতো নামি হোটেলগুলো। অতিথিরা হোটেল থেকে অনুষ্ঠানস্থলে যাবেন নির্দিষ্ট পথে। এ সময় বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ এবং ডাইভারশন করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া সীমান্তেও শুরু হয়েছে কড়া নজরদারি।
নরেন্দ্র মোদীর নতুন মন্ত্রিসভায় ২৭–৩০ জন সদস্য থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ হবেন এনডিএ জোটের সদস্য। সঙ্গে কয়েকজন প্রতিমন্ত্রীও থাকতে পারেন।
বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল : লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশের রায়েবরেলি এবং নিজের কেন্দ্র কেরালার ওয়েনাড় থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী। সিডব্লিউসির সভায় রাহুলকে বিরোধী দলীয় নেতা করার ব্যাপারে প্রস্তাব উঠলে তিনি বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি ভাববেন। তখন কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে তাকে মনে করিয়ে দেন, সিডব্লিউসি এ বিষয়ে প্রস্তাব পাস করেছে। পদটি তারা গ্রহণ করা উচিত।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেসি ভেনুগোপাল সভার পর বলেন, পৃথক একটি প্রস্তাবে সিডব্লিউসি রাহুল গান্ধীকে বিরোধী দলীয় নেতার পদ গ্রহণে সর্বসম্মতভাবে অনুরোধ করেছে। সভায় অংশগ্রহণকারী সবাই একমত যে, রাহুল গান্ধীরই বিরোধী দলীয় নেতা হওয়া উচিত।
প্রয়োজনীয় আসন না পাওয়ায় গত দুই নির্বাচন ২০১৪ ও ২০১৯ সালে লোকসভায় কেউ বিরোধী দলের নেতা ছিলেন না। বিরোধী দলের মর্যাদা পেতে গেলে ৫৪৩টি আসনের অন্তত ১০ শতাংশ আসন জিততে হয়। গত দুই মেয়াদে কংগ্রেস কিংবা অন্য কোনো দলই তা পায়নি। এবারের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস কেবল এককভাবেই নয়, জোটগতভাবেও এগিয়েছে। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের দখলে এসেছে ২৩৩ আসন; যেখানে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ইউপিএ জোট ১০০ এরও কম আসন পেয়েছিল।
২০১৯ সালে ৫২টি আসন পাওয়া কংগ্রেস এবার এককভাবে ৯৯ আসনে জিতেছে। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরুদ্ধে মুখোমুখি লড়াইয়ে ২৯ শতাংশ আসনে দলটি সাফল্য পেয়েছে। এবার কংগ্রেস ৯৯ আসনে জিতে প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পাচ্ছে।
রাহুলকে বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেসি ভেনুগোপাল বলেন, এই নির্বাচনে আমরা বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্য, নারী, অগ্নিবীর এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের মত গুরুত্বপূর্ণ জরুরি বিষয়গুলো তুলে ধরেছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে মানসম্মত, শক্তিশালী এবং সংবিধান রক্ষাকারী সজাগ বিরোধীদলের জন্য বিরোধী দলীয় নেতার পদটি রাহুল গান্ধীরই হওয়া উচিত।