ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে প্রশাসন, সিপিপিসহ সংশিষ্টরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতের পাশাপাশি খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
কর্ণফুলী : পটিয়া প্রতিনিধি জানান, কর্ণফুলী উপজেলায় প্রস্তুত করা হয়েছে ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্র এবং খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। কেন্দ্র অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ট্যাগ অফিসার। উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ০১৮৬৬–২৮৩৮১৫ হেল্প নাম্বার থেকে যাবতীয় তথ্য ও সহযোগিতা পাওয়া যাবে। জরুরি প্রয়োজনে সেবা পেতে উক্ত নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। উপজেলার চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের চার আশ্রয়কেন্দ্রে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে কর্ণফুলী জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ সহকারী প্রকৌশলী নাজিম উদ্দিন রাসেলকে। যার মোবাইল নাম্বার ০১৭৫৯–৪৬৪৩২৭। জুলধা ইউনিয়নের ৫টি আশ্রয়কেন্দ্রের ট্যাগ অফিসার হলেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মহিউদ্দিন আলমগীর। যার মোবাইল নং–০১৮১৯–৮৩০৬২১। বড়উঠান ইউনিয়নে ট্যাগ অফিসারের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা সহকারী প.প কর্মকর্তা সুমিত কুমার ভট্টাচার্য। যার মোবাইল নং–০১৮১৬–৮৩০৩০৬। শিকলবাহার ৪টি আশ্রয়কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করবেন উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সবুর আলী। যার মোবাইল নাম্বার–০১৭৩৫–৯৭২৭৮৭। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য জানতে বা সহায়তার জন্য ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করা যাবে।
সীতাকুণ্ড : সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে দুর্গত এলাকা থেকে মানুষকে দ্রুত আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে সীতাকুণ্ডে ৬২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে উপজেলা প্রশাসন, সিপিপিসহ সংশিষ্টরা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। এছাড়া উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে গতকাল শনিবার সকাল থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ৬২টি আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন, কলেজ ভবনগুলোকে লোকজনের আশ্রয়ের জন্য প্রস্তুত রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনের খাবারের জন্য ১০ টন চাল, ৪০ হাজার টাকা ও শুকনো খাবার বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সময় চিকিৎসাসেবার জন্য ১০টি পৃথক মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ মজুত রাখা হয়েছে। এছাড়া সরকারি দুটি অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি বেসরকারি বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মীরসরাই : মীরসরাই প্রতিনিধি জানান, মীরসরাইয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে ৭৮টি আশ্রয়কেন্দ্র। ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে যোগাযোগের জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) মীরসরাই উপজেলা টিম লিডার এম সাইফুল্লাহ দিদার জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় মীরসরাইয়ে সিপিপির ১৬শ’ নারী–পুরুষ কর্মী নিয়েজিত রয়েছেন। উপকূলীয় অঞ্চলসহ ১৬টি ইউনিয়নে মাইকিং করা হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল কর্মকর্তা–কর্মচারীদেরকে নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে। উপকূলবাসীদের আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর এলাকায় দেশি–বিদেশী কোম্পানিতে কর্মরতদের বেজা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিরাপদ স্থানে আসার জন্য বলা হয়েছে।
হাটহাজারী : হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, হাটহাজারীতে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ ব্যাপক প্রস্ততি গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহিদুল আলম জানান, উপজেলায় ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র, ২১টি মেডিকেল টিম ও ৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। পাহাড়ের ঢালে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারী মনাই ত্রিপুরা পল্লীর লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। লোকজনকে সচেতন করতে মাইকিং করা হচ্ছে। জলোচ্ছ্বাসের সময় লোকজনে উদ্ধারের জন্য শতাধিক নৌকা প্রস্তত রাখা হয়েছে। প্রতি ইউনিয়নে ১টি মেডিকেল টিম এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫টি মেডিকেল টিম রাখা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা, ফায়ার সার্ভিস, যুব উন্নয়ন, সমবায় অধিদপ্তর আওতাধীন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
রাঙামাটি : রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, রাঙামাটিতে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, রাঙামাটি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ২৯টি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ২০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সম্ভাব্য আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নিকটবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুমের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর নম্বর (০১৮২০৩০৮৮৬৯), জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নম্বর (০১৫৫০০২৮৭০৭) এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (০২৩৩৩৩৭১৬২৩) নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে এবং আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনায় প্রতি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে টিম গঠন করা হয়েছে। রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় প্রবল বৃষ্টিপাত এবং ভূমিধসের আশংকা রয়েছে। রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় পাহাড়ের ঢালে ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারী সকল লোকজনকে প্রবল বর্ষণ শুরু হওয়ার সাথে সাথেই নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, গতকাল শনিবার বিকাল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কাপ্তাই লেকে সকল ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
লামা : লামা প্রতিনিধি জানান, লামায় ৫৩টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসাকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণার পাশাপাশি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এছাড়া লামা পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ঝুঁকিপূর্ণ ও কাঁচা ঘরে বসবাসকারীদের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে নিরাপদে আশ্রয় গ্রহন করার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের জন্য উপজেলায় ৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্ধ পাওয়া গেছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি : নাইক্ষংছড়ি প্রতিনিধি জানান, নাইক্ষ্যংছড়িতে ৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া পাহাড় বা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বসতি থেকে নিরাপদে চলে আসতে সর্বসাধারণকে অনুরোধ করছে কতৃপক্ষ। এ ব্যাপারে মাইকিং করে প্রচারণা চালানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোমেন শর্মা বলেন, উপজেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আপদকালীন খাবার, পানি ও পরিবহন ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ, গ্রাম পুলিশসহ সেবামূলক সব প্রতিষ্ঠানকে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্ক রাখা হয়েছে।