মৈত্রেয়ী দেবী : প্রগতিবাদী কথাসাহিত্যিক

| শুক্রবার , ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ

মৈত্রেয়ী দেবী। কবি, লেখক ও ঔপন্যাসিক। মাত্র ষোল বছর বয়সে প্রকাশিত তাঁর লেখা কবিতার বই ‘উদিতা’র ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্র্রনাথ ঠাকুর। অল্প বয়স থেকেই মৈত্রেয়ী কবির স্নেহধন্য হয়েছিলেন। তার বিখ্যাত আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ন হন্য তে তাকে বিশেষ খ্যাতি এনে দেয়। এই উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৭৬ সালে সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। সাহিত্য ছাড়াও সমাজসেবায় অনন্য অবদান রেখেছেন। ১৯৭৭ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হন। মৈত্রেয়ী দেবীর জন্ম ১৯১৪ সালের ১লা সেপ্টেম্বর। পারিবারিক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তার বেড়ে ওঠা। তিনি ১৯১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর তার বাবার কর্মস্থল চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত ও মায়ের নাম হিমানী মাধুরী রায়। তার বাবা ছিলেন একজন দার্শনিক ও প্রাবন্ধিক। তার শৈশব কাটে বাবার বাড়ি বরিশাল জেলার আগৈলঝারার গৈলা গ্রামে। ১৯৩৬ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগমায়া দেবী কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। আর সাহিত্য সাধনা করতেন ছেলেবেলা থেকেই। সাহিত্য রচনায় তিনি ছিলেন রবীন্দ্র্রনাথের ছাত্রী। মৃত্যুর চার বছর আগে মৈত্রেয়ীর মংপু’র বাড়িতে কবিগুরু চারটি অবকাশে প্রায় আট মাস যাপন করেছিলেন। সেই স্মৃতি নিয়ে মৈত্রেয়ী দেবী রচনা করেন অনবদ্য সাহিত্যকর্ম ‘মংপুতে রবীন্দ্রনাথ’। মৈত্রেয়ী দেবী রচিত গ্রন্থের মধ্যে চার খণ্ডের কাব্যগ্রন্থ, ভ্রমণকাহিনি এবং দর্শন ও সমাজসংস্কারমূলক বেশ কিছু রচনা রয়েছে। রবীঠাকুরকে নিয়ে রচিত তাঁর স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় আটটি। ভারত বিভক্তির পর উপমহাদেশে যে সামপ্রদায়িকতা ছড়িয়ে পড়েছিল তার বিরুদ্ধে মৈত্রেয়ী ছিলেন সোচ্চার কণ্ঠ। সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি রক্ষায় ১৯৬৪ সালে তিনি গড়ে তুলেছিলেন ‘সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি পরিষদ’।
১৯৭১-এ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থী শিবিরে ত্রাণকাজে নিযুক্ত ছিলেন মৈত্রেয়ী। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘ন হন্যতে’, ‘উদিতা’, ‘বিত্তছায়া’, ‘স্তবক’, ‘আদিত্য মরীচি’, ‘হিরন্ময় পাখী’, ‘মংপুতে রবীন্দ্রনাথ’, ‘বিশ্বসভায় রবীন্দ্রনাথ’, ‘কবি সার্বভৌম’, ‘এত রক্ত কেন’, ঋগ্‌েবদের দেবতা ও মানুষ’, ‘মহা সোভিয়েত’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ‘ন হন্যতে’-র জন্য লেখিকা ভারত সরকার প্রদত্ত সাহিত্য আকাদেমী পুরস্কার লাভ করেন। ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ উপাধিতেও ভূষিত করে। তাঁর সাবলিল ও আকর্ষণীয় রচনাশৈলী সহজেই পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। ১৯৯০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধসোনালী ধানে কৃষকের হাসি