চলতি বছরের মে মাসে ১১টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৭ জন নিহত, ৩ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। চুরি বা ডাকাতি সন্দেহে এসব গণপিটুনির ঘটনা ঘটে।
মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে গতকাল মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চলতি বছরের মে মাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা গত এপ্রিল মাসের তুলনায় বেড়েছে। ১ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে তারা মাসিক প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি ঘটনা স্থানীয় হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারদের মাধ্যমে যাচাই করা হয়েছে। এমএসএফ জানায়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী চলতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, শুধু গণপিটুনি নয়; ধর্ষণসহ নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতার ঘটনাও গত মাসের তুলনায় চলতি মাসে উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। মে মাসে ৩৮টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে চারজন নিহত এবং ১৬ জন গুলিবিদ্ধসহ ৫৬৯ জন আহত হয়েছে। একই সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার দুটি ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে একজনের, কারাগারে পুলিশি হেফাজতে আটজন এবং পুলিশের গ্রেপ্তারকালে ধাওয়া খেয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
এমএসএফ জানিয়েছে, মে মাসে ৪১৪টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ৮৪টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২২টি, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে চারটি। এদের মধ্যে চারজন কিশোরীসহ ১০ জন প্রতিবন্ধী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে এক প্রতিবন্ধী কিশোরী ও দুই নারী।
মে মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুটি মামলায় একজন সাংবাদিকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ২৭ জন সাংবাদিক কাজে বাধা পাওয়া এবং হয়রানির শিকার হয়েছেন।
এর আগের মাসে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ১১টি ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি এ মাসে গণপিটুনিতে কমপক্ষে তিনজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এপ্রিল মাসে ৩৬৭টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণের ঘটনা ছিল ৭১টি। এর মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৪টি, ধর্ষণ ও হত্যা ২টি। এর মধ্যে ৯ জন প্রতিবন্ধী শিশু–কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সাত মামলায় দুই আইনজীবী, একজন সাংবাদিক, একজন বিরোধী দলীয় নেতার ভাই ও একজন প্রবাসীসহ মোট ৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ মাসে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় একজন সাংবাদিক সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। ১২ জন সাংবাদিক দায়িত্ব পালনে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে আহত হন, দুজন সাংবাদিককে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে, ৬ সাংবাদিককে হয়রানি করা হয়েছে, একজন সাংবাদিককে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আক্রমণ ও সীতাকুণ্ডে এক সাংবাদিকের বাড়িঘর ভাঙচুর ও পরিবারের সদস্যদের গালাগালিসহ সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দেয় সন্ত্রাসীরা।
