মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে ছাত্রলীগের কার্যক্রম

মহানগর, দক্ষিণ ও উত্তর জেলা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৪ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে চট্টগ্রাম মহানগর-উত্তর ও দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কার্যক্রম। ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর ইমরান আহমেদ ইমুকে সভাপতি ও নূরুল আজিম রনিকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর কেটে গেছে ৯ বছর। এখন ১০ বছর চলছে। এখনও ভাঙেনি সেই ‘এক বছরের কমিটি’। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ক্ষমতা বদল হয়েছে চারবার। কিন্তু চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগ চলছে প্রায় এক দশক আগের কমিটি দিয়ে। কবে ফুরাবে এই কমিটির মেয়াদ এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন নগরের পদপ্রত্যাশীরা। ইমু-রনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ২৯১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর বিভিন্ন সময় আরও বেশ কয়েকজনকে কমিটিতে পদ দেওয়া হয়। সেই হিসেবে কমিটির সদস্য সংখ্যা তিনশ’ ছাড়িয়েছে।

তবে এ কমিটির বেশিরভাগ নেতাই এখন অছাত্র। অনেকে রাজনীতি ছেড়ে করছেন চাকরি। প্রায় একশ’র মতো নেতা বিয়ে করে হয়েছেন সংসারী। ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের অনুমোদনে ইমরান আহমেদ ইমুকে সভাপতি এবং নূরুল আজিম রনিকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৪ জনের আংশিক কমিটি দেওয়া হয়। ২০১৪ সালের ১১ জুলাই এসে ২৯১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন পায়। তবে ২০১৮ সালের ২০ এপ্রিল নূরুল আজিম রনির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে অব্যাহতি দিয়ে স্থলাভিষিক্ত করা হয় জাকারিয়া দস্তগীরকে।

কেন্দ্রীয় কমিটির ২০১১ থেকে ২০১৫ মেয়াদে সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের কমিটির পর ২০১৫ থেকে ২০১৮ মেয়াদে মো. সাইফুর রহমান সোহাগ সভাপতি ও এসএম জাকির হোসাইন সাধারণ সম্পাদক হন। এ কমিটির কার্যক্রম শেষে ২০১৮ থেকে ২০১৯ মেয়াদে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন সভাপতি ও মো. গোলাম রাব্বানী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর আল নহিয়ান খান জয় সভাপতি ও লেখক ভট্টাচার্য সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর বর্তমানে ছাত্রলীগের সভাপতি পদে সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন।

দক্ষিণ জেলার এক কমিটিতে পাঁচ বছর পর : ২০১৭ সালে এসএম বোরহান উদ্দিনকে সভাপতি এবং আবু তাহেরকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্যের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সেই কমিটিই ২০২০ সালের ৪ মার্চ বর্ধিত আকারে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটিতেও গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে ঢাউস সাইজের কমিটি দেয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত ওই তালিকায় পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা : চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। নগরের ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়াারি অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন। তুমুল সংঘর্ষে সেই সম্মেলন পণ্ড হলে ৩ মাস পর ৫ মে দুই সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। প্রথমে দুই সদস্যের কমিটি দিয়েই আড়াই বছর পার করেছে উত্তর জেলা ছাত্রলীগ। ২০১৮ সালের ৫ মে কেন্দ্র থেকে উত্তর জেলা ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সভাপতি হন তানভীর হোসেন তপু এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় রেজাউল করিমকে। তাদের দুজনের কমিটি প্রায় আড়াই বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালের ৩১ জুলাই কেন্দ্র থেকে ৩১৬ সদস্যের ঢাউস সাইজের একটি কমিটি দেয়া হয়। সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে এই ঢাউস সাইজের কমিটি দেয়া হয়।

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ ৪ জানুয়ারি। ১৯৪৮ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বাঙালির স্বাধিকারের বিভিন্ন আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বত্রই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রলীগ। তবে সময়ের পরিক্রমায় ছাত্রলীগ একাধিক ধারায় বিভক্ত হয়। সামপ্রতিক বছরগুলোতে নিজেদের মধ্যে দলাদলি, অন্তঃকোন্দল, হামলা-মারামারিসহ নানা কারণে ছাত্রলীগের সমালোচনাও আছে। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও চট্টগ্রামে তেমন কোন চোখে পড়ার মতো কর্মসূচি নেই ছাত্রলীগের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহ্যালো গডফাদারস অ্যান্ড গং কাদের ইঙ্গিত করলেন রাজ?
পরবর্তী নিবন্ধসৈয়দ মঈনুদ্দিন হোসেন স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন