মেহেদী হাসান : কিংবদন্তি গজল সম্রাট

| সোমবার , ১৩ জুন, ২০২২ at ৮:৩২ পূর্বাহ্ণ

মেহেদী হাসান। উপমহাদেশের অন্যতম প্রবাদপ্রতিম গায়ক ও সুরস্রষ্টা। গজল সম্রাট মেহেদী হাসানের গজল শুনে কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী লতা মুঙ্গেশকর বলেছিলেন, ‘মেহেদী হাসানের কণ্ঠে বাস করেন স্বয়ং ঈশ্বর’। এ জন্যই বোধ হয় তাঁকে বলা হয় শাহেনশাহ-ই-গজল। ১৯২৭ সালের ১৮ জুলাই ভারতের রাজস্থানের ঝুনঝুনু জেলার লুনা গ্রামে এক ঐতিহ্যবাহী সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে বাবা ওস্তাদ আজিম খান ও চাচা ওস্তাদ ইসমাইল খানের কাছে তার সংগীতের হাতেখড়ি। ১৯৪৭-এ দেশ ভাগের পরে ২০ বছর বয়সী মেহেদী হাসান এবং তাঁর পরিবার ভারত ছেড়ে পাকিস্তানের শাহিওয়াল এলাকায় চলে আসেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর ২০ বছর বয়সী মেহেদী হাসান এবং তার পরিবার পাকিস্তানে অভিবাসিত হয়। সেখানে তাকে ব্যাপক অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগতে হয়। সে সময় একটি সাইকেলের দোকানে মেকানিকের কাজ করেন। আর্থিক অসচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও তিনি সংগীতচর্চা অব্যাহত রাখেন। ১৯৫৭ সালে তিনি ঠুমরি গায়ক হিসেবে পাকিস্তান বেতারে প্রথম গান গাওয়ার সুযোগ পান। প্রাথমিকভাবে সেখানে তিনি ঠুমরি গায়ক ছিলেন। সঙ্গীতবোদ্ধাদের মন জয় করে তিনি ধীরে ধীরে নিজেকে পরিচিত করে তোলেন। তখন তিনি উর্দু কবিতার প্রতি ঝুঁকে পড়েন এবং পরীক্ষামূলকভাবে গজল গাওয়া শুরু করেন। মেহেদি হাসান দীর্ঘ পাঁচ দশকের সংগীতজীবনে উর্দু, বাংলা, পাঞ্জাবি ও আফগান ভাষায় ২৫ হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন। বাংলাদেশে বেশ কয়েকবার এসেছেন এই শিল্পী। বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে দ্বৈত সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। তার গাওয়া বাংলা গান ‘হারানো দিনের কথা মনে পড়ে যায়’, ‘ঢাকো যত না নয়ন দু’হাতে’, ‘তুমি যে আমার’ প্রভৃতি বাংলা সংগীতের ভাণ্ডারকে করেছে সমৃদ্ধ। লাহোরভিত্তিক চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক গায়ক ও সংগীত পরিচালক হিসেবেও তিনি ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। সুদীর্ঘকাল সংগীত ভুবনে অবস্থান করে তিনি অগণিত পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তার মধ্যে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ‘তমঘা-ই-ইমতিয়াজ’, ‘প্রাইড অব পারফরম্যান্স’, ‘হিলাল-ই-ইমতিয়াজ’ ও ‘শাহেনশাহ-ই-গজল’ উপাধিতে ভূষিত হন। এছাড়া ১৯৭৯ সালে ভারত সরকার ‘সায়গল অ্যাওয়ার্ড ইন জলন্ধর’ এবং ১৯৮৩ সালে নেপাল সরকার তাকে ‘গোর্খা দক্ষিণা বাহু’ উপাধি দেয়। গত শতকের আশির দশকের শেষের দিকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন মেহেদি হাসান। ২০১২ সালের ১৩ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখ্রি পূ ৩২৩ আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট-এর মৃত্যু।
পরবর্তী নিবন্ধবাজেট ও সাধারণ মানুষ