মুহূর্তেই শেষ পিতা-পুত্রের জীবন

যাচ্ছিলেন রিকশা করে, চাপা পড়লেন লরি থেকে ছিটকে পড়া কন্টেনারে ।। স্টিল মিল বাজারে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১১ মে, ২০২৩ at ৫:১৮ পূর্বাহ্ণ

নগরীর পতেঙ্গায় চলন্ত লরি থেকে একটি কন্টেনার ছিটকে পড়ে তাতে চাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন রিকশারোহী পিতাপুত্র। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ পতেঙ্গা থানার সন্নিকটে স্টিল মিল বাজারে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। হতভাগ্য পিতার নাম ইউনূস মিয়াজি (৫৯)। তিনি চিটাগাং সাইলোর অপারেটর। সাথে মারা যাওয়া পুত্রের নাম আবদুর রহিম মিয়াজি (২৩)। তিনি চাঁদপুর মতলব কলেজের স্নাতক পর্যায়ের ছাত্র। এ ঘটনায় রিকশাচালক মোরশেদ আলম (২৭) গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানিকৃত পণ্যবোঝাই একটি কন্টেনার নিয়ে ওওসিএল১০৫ নম্বরের একটি লরি পতেঙ্গার কাঠগড়স্থ বেসরকারি কন্টেনার ডিপো এসএপিএল এ যাচ্ছিল। পথিমধ্যে পতেঙ্গা থানার সন্নিকটে ইপিজেড থানাধীন স্টিল মিল বাজারের খালপাড়ের মোড় এলাকায় গাড়ির উপর থেকে কন্টেনারটি ছিটকে রাস্তায় পড়ে যায়। তাতে ছিল আমদানিকৃত ১৮ টন সোডা। এই সময় রাস্তায় দিয়ে স্টিলমিল বাজার থেকে সাইলোর দিকে যাওয়া একটি রিকশা দৈত্যকার কন্টেনারটির নিচে চাপা পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ এবং স্থানীয় শত শত মানুষ উদ্ধার অভিযানে নামে। পরবর্তীতে ক্রেন এনে কন্টেনারটি সরিয়ে ভিতরের দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া রিকশা থেকে থেতলে যাওয়া দুইটি লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ দুইটি হতভাগ্য পিতাপুত্রের। সেখান থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় রিকশাচালক মোরশেদ আলমকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

জানা যায়, চিটাগাং সাইলোর অপারেটর মোহাম্মদ ইউনূস মিয়াজি পুত্র আবদুর রহিম মিয়াজিকে নিয়ে রিকশা করে যাওয়ার পথে কন্টেনার চাপা পড়ে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারান। তারা স্টিলমিল বাজারের সোনালী ব্যাংক থেকে টাকা তোলেন। স্থানীয় একটি ফার্মেসি থেকে কিছু ওষুধ কিনেন। ওখানে দাঁড়িয়ে পিতাপুত্র পানিও খান। পরে রিকশা নিয়ে সাইলো কোয়ার্টারের বাসায় ফিরছিলেন। পুত্র আবদুর রহিম একদিন আগে মাত্র চাঁদপুর থেকে পিতার কাছে বেড়াতে এসেছিলেন। তাদের বাড়ি চাঁদপুরের মুন্সিরহাট এলাকার বিঞ্চপুর গ্রামে।

ইপিজেড ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ কে এম রায়হানুল আশরাফ হোসেন জানান, লরির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রিকশার উপর কন্টেনারটি ছিটকে পড়ে। এতে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। রিকশাটি দুমড়ে মুচড়ে গেছে। ক্রেন এনে কন্টেনারটি রাস্তা থেকে সরিয়ে নেওয়ার পর ভিতর থেকে দুইটি লাশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকাজে ছুটে আসেন নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা। দুর্ঘটনার পর বিমানবন্দর সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ইপিজেড থানার সাব ইন্সপেক্টর রূপক কান্তি চৌধুরী জানান, লরিতে কন্টেনারটি যেভাবে লক করার কথা ছিল সেভাবে করা হয়নি। এতে করে ব্রেক করার সাথে সাথে এটি ছিটকে পড়ে। ঘটনার পরই চালক মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেনকে আটক করা হয়েছে। উক্ত চালকের লাইসেন্স রয়েছে। ঘটনার ব্যাপারে ইপিজেড থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। লাশ দুইটি উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করা হবে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, ইউনূস মিয়াজি এবং রহিম মিয়াজির স্বজনেরা চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রামে এসেছেন।

সিএমপির বন্দর জোনের সহকারী কমিশনার শাকিলা সোলতানা বলেছেন, লরিতে কনটেইনার লোহার শেকল দিয়ে বাঁধা থাকে, লক করে রাখা হয়। ধারণা করছি, এটি ভালোভাবে আটকানো ছিল না। এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৫০ দিন পর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল ইউনূস মিয়াজির
পরবর্তী নিবন্ধফেব্রিক্স-রাসায়নিক পদার্থসহ ৬০ লট পণ্যের নিলাম ২১ মে