মুরশাল, সাদিয়া এবং শেহনাজ শুধু নয়…

রিতু পারভি | শনিবার , ৩ এপ্রিল, ২০২১ at ৭:৫৭ পূর্বাহ্ণ

আফগানিস্তানে তালেবান শাসন শেষে নারীরা একটু একটু করে ঘরের বাহির হওয়া শুরু করেছে মাত্র। নারীরা শুধু মাত্র ঘরের কাজে নিয়োজিত থাকবে, বাইরে কাজ করা তাদের জন্য নিষিদ্ধ এমন তালেবানি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অসংখ্য তরুণী ঘরের বাইরে বিভিন্ন পেশায় তাদের নিযুক্ত করেছে। এমনি তিন তরুণী মুরশাল ওয়াহিদি, সাদিয়া সাদাত এবং শেহনাজ। স্থানীয় এক টেলিভিশন চ্যানেলের তিন নারীকর্মী।
কাজ শেষে সেদিনও বাড়ি ফিরছিলেন মুরশাল ওয়াহিদি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আফগান ভাষায় ডাবিং করেন তিনি। বিশেষ করে তুর্কী এবং ভারতীয় অনুষ্ঠানের আফগান ভাষায় কন্ঠ দিতেন মুরশাল। স্কুল গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে মুরশাল যোগ দিয়েছিলেন টেলিভিশন চ্যানেলটিতে। পঁচিশ বছর বয়সি মুরশালের সামনে তখন পড়ে রয়েছে সমস্ত জীবন। বিকেল গড়িয়ে ঠিক সন্ধ্যার মুখটাতে মেশিনগানের গুলি ঝাঁঝরা করে দেয় মুরশালের দেহ, মুখ থুবড়ে পড়ে তাঁর স্বপ্ন। ১লা মার্চ এই ঘটনা ঘটে আফগানিস্তানের পূর্ববর্তী শহর জালালাবাদে।
একই সময়ে, একই শহরে আরেকটি ঘটনায় মেশিনগানের গুলিতে খুলি উড়িয়ে দেয় সবেমাত্র বিশের কোঠায় পা দেয়া সাদিয়া সাদাত আর শেহনাজের। তারাও তখন কাজ শেষে ঘরে ফিরছিলেন। একই ঘটনায় শেহনাজের ব্যক্তিগত গাড়ির চালকও নিহত হন, আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন আরেক নারীকর্মী। তারা সবাই ছিলেন স্থানীয় এক রেডিও ও টিভি চ্যানেল ইনিকাসের কর্মী। তিনজনই কাজ করতেন ডাবিং সেকশনে। তাদের একমাত্র অপরাধ নারী হয়ে তারা শুধুমাত্র ঘরে কাজ না করে ঘরের বাইরে কাজের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন।
ঘরের বাইরে কাজ করার অপরাধে গত ডিসেম্বর মাসে হত্যা করা হয় ইনিকাস টিভি চ্যানেলের আরেক নারী সাংবাদিক মালালাই মাইওয়ান্দকে যার মা’কেও পাঁচ বছর আগে উগ্রবাদীরা হত্যা করে কারণ তিনি কাজ করতেন নারী অধিকার নিয়ে। ইনিকাস ২০১৮ সালে তাদের কার্যক্রম শুরু করলে দশজন নারী কর্মীকে নিযুক্ত করেন। এর মধ্যে চারজন নিহত, একজন মৃত্যুর সাথে লড়ছে, বাকিরা আপাতত কাজে আসতে ভয় পাচ্ছে এবং কর্তৃপক্ষও তাদের আপাতত ঘরের বাইরে বেরুতে না করেছে।
আফগানিস্তানে চরমপন্থী দলগুলো নারী শিক্ষার এবং নারীর ঘরের বাইরে কাজ করার ঘোর বিরোধী। নারীদের অগ্রগতি রোধ করতে তারা টার্গেট করে মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক এবং নারী কর্মীদের। এমন ঘৃণ্যতম কাজের মধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে চলে সর্বস্তরের মানুষের প্রতিবাদ। সামপ্রতিক এমনি এক প্রতিবাদে সরকার নারীদের সামাজিক অনুষ্ঠানে গান গাওয়াকে নিষিদ্ধ করে প্রণীত আইন বাতিল করতে বাধ্য হয়। স্কুলের ছাত্রীরা এই আইনের বিরুদ্ধে অহিংস প্রতিবাদ শুরু করে এবং ধীরে ধীরে তাতে যুক্ত হয় সর্বস্তরের মানুষ। অগত্যা সরকার তালেবানদের মন রক্ষার জন্য গৃহীত আইন বাতিল ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
আফগানিস্তানে নারীদের ধর্মের দোহাই দিয়ে যেভাবে নির্যাতন করা হয় তা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে বিশ্বের সামনে উন্মুক্ত হচ্ছে বারবার। কট্টরপন্থীদের নিকৃষ্ট এবং ঘৃণ্য আচরণ সমর্থন করে না দেশটির বেশিরভাগ মানুষ। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হয়তো রোধ করা সম্ভব হবে এই শতাব্দীর নারীদের উপর সবচেয়ে ঘৃণ্যতম অত্যাচার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমুক্তি
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ৫২৩ নমুনায় আরও ৪৬৭ জনের করোনা শনাক্ত