মুনিয়া’র আত্মদহন

সুমি দাশ | বুধবার , ৫ মে, ২০২১ at ৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ

আমি যে আজ বড্ড দিশেহারা। হতাশা, ব্যর্থতা, অবজ্ঞা অবহেলা, অপমান ঘুণপোকার ন্যায় কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে আমার শরীরের রক্ত, নরম মাংসপিণ্ড। আবার দুশ- ছ খানা হাড়ও চিবিয়ে খাচ্ছে। আছে শুধু অনুভূতিহীন জীর্ণ শীর্ণ, অবসন্ন দেহখানি। যার ভিতরে বাইরে কোনো প্রকার প্রাণের স্পন্দন নেই। মাঝে মাঝে ভাবি আমার সমস্ত শরীরের প্রতিটা অঙ্গের আলাদা আলাদা স্বাদ, গন্ধ তোমাকে তুষ্ট করতে পারেনি। ওহে প্রিয়, আমার ভালোবাসা, আমার বিশ্বাস, আমার নির্ভরতা, আমার স্বপ্ন, সবটাই তোমার সূক্ষ্ম ছলনার জালে আজ পরাজিত। বুঝতে পারিনি দেহলীলায় কিছু সময় আত্মতুষ্টি মাত্র, কিন্তু ভিত্তিহীন ভালোবাসা কেবল ঘুণে ধরে তিল তিল করে গড়া প্রত্যাশাগুলোকে গুঁড়িয়ে দেয়। তুমি চেয়েছো বলে, বড্ড বিশ্বাস করে সেদিন তোমার হাতটা ধরেছিলাম, ভেবেছিলাম চিরকাল শক্ত খুঁটির ন্যায় পাশে থাকবে, ভালোবাসবে। ভুলে গেছি দিনশেষে তোমার পিছুটান তোমার সংসারে ফিরে যাবে। যেটার ভিত্তি কাগজে লিখিত সারাজীবন একসাথে থাকার চুক্তি। সাক্ষী আকাশ, বাতাস, চন্দ্র-সূর্য আর হাজারো মানুষের উপস্থিতি। ভালোবাসা যে বয়স, গোত্র জাত কিছুই মানে না। পারিনি নিজের মনকে বোঝাতে, চাঁদকে কেবল দেখা যায়, কিন্তু স্পর্শ করা যায় না। আমি সেদিন চাঁদের দিকেই হাত বাড়িয়েছি, বুঝিনি আসমান জমিন ব্যবধান। তাই আমার অল্প অল্প করে জমানো স্বপ্ন, আবেগ অভিমানগুলো তোমার চোখ এড়িয়ে গেল। টাকায় যে ভালোবাসা কেনাবেচা হয় তা বুঝতে পারিনি। আমি কতটা অবুঝ, সারাদিন পোষা বিড়ালের সাথে কতো কথা বলি, কতো ছবি তুলি। প্রাণীটি আমার অভিমানী চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমায় কতটা ভালোবাসে, যতটা আমি তাকে বাসি। সে আমার একমাত্র বিশ্বাসী বন্ধু, তুষি। ডায়েরির পাতাগুলো অভিমানে ভারী হয়ে গেছে। ইচ্ছে করছে না আর লিখতে। সেদিন আসবে বলেও আসোনি। তোমার জন্য সব ছেড়ে আমি অট্টালিকায় কতটা সুখে আছি! মোহের তাগিদেই মাঝে মাঝে আসো শরীরের ঘ্রাণ নিতে। ভালোবাসাটা তোমার জন্য শুধু মোহই মাত্র। বুঝতে পারিনি, তাই সমাজ, পরিবার থেকে আজ আমি বিতাড়িত, শুধু তোমাকে রাখবো বলে আমার ছোট্ট হৃদয়ের মনিকোঠায়। তোমার জন্য আমি সমাজ স্বীকৃত রক্ষিতা বা দেহপ্রসারিণী। এক টুকরো মায়া আর সুখ বড্ড প্রয়োজন ছিল। যেটির অভাব ছিল অনেক বছর ধরে। কিন্তু এটার আশা করা আমার জীবনে কাল হয়ে গেল। ভালোবাসা আমায় ভুল বুঝলো। মিথ্যা অপবাদ আর গ্লানি আর হয়তো মুছা গেল না। বেঁচে থেকেও বা কি লাভ বলো? আমার ভালোবাসা, আমার শরীর আজ তোমার অপ্রিয়, ঘেন্নার হয়ে গেল। ছুঁড়ে ফেলে দিলে এক খণ্ড টিস্যু পেপারের ন্যায়। আর পারছি না সইতে, বড্ড অসহায় লাগছে। ভাবতে ভাবতে ক্লান্তি আমায় চেপে বসেছে। অপেক্ষা আর আশা দুটোই অভিমানে মিশে একাকার হয়ে দম বন্ধ হয়ে আসছে। অভিমান ভরা কষ্টগুলো না হয় ডায়েরির ভাঁজে ভাঁজে থাক। একসময় সব পাতাগুলো ঘুড়ির মতো উড়ে যাবে দূর থেকে দূর আকাশে। তুমি খুঁজে নিও ছোট ছোট অবুঝ মনের স্বপ্নে ভরা জমানো কষ্ট আর অভিমানে ভরা পাতাগুলো। আমি না হয় চলেই গেলাম, চাপা কষ্ট নিয়ে। আমি আকাশের তারা হয়ে তোমায় দেখে বলছি– তুমি সুখে থেকো তোমার অর্থের অহংকারে, নতুনের সন্ধানে, ছলনার বন্ধনে। হে বিধাতা, ‘ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো’।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমশার কামড় ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে জনজীবন বিপর্যস্ত
পরবর্তী নিবন্ধএক নিরহংকারী মানুষের প্রস্থান : যাঁর ভালবাসার ঋণ শোধ করার নয়