মুজিব নামের আলোকশিখা

| রবিবার , ২১ মার্চ, ২০২১ at ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

তিনি বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, ইতিহাসের দুই মাহেন্দ্রক্ষণের উদযাপনে দাঁড়িয়ে স্মৃতিকাতর বাংলাদেশ সেই শেখ মুজিবকে স্মরণ করল তারই তারুণ্যের আলোয়। গতি আর প্রগতিতে তিনি ছিলেন তারুণ্যের মূর্ত প্রতীক, একজন সত্যিকারের ‘রকস্টার’। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে ১০ দিনের অনুষ্ঠানমালার চতুর্থ দিন শনিবারের অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল ‘তারুণ্যের আলোকশিখা’। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা এদিন বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ওআইসির মহাসচিব ইউসুফ বিন আহমেদ আল ওথাইমিন, ফ্রান্সের সেনেটর ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপ ফর সাউথ ইস্ট এশিয়ার প্রেসিডেন্ট মাদাম জ্যাকুলিন জেরোমেডি ভিডিও বার্তায় বাঙালিকে শুভেচ্ছা জানান, বঙ্গবন্ধুর প্রতি জানান শ্রদ্ধা। খবর বিডিনিউজের
কৈশোর থেকেই মুজিবের মাঝে স্পষ্ট হয়ে উঠছিল সহজাত নেতৃত্ব গুণ। ছাত্রজীবনের নানা ঘটনায় তার রাজনৈতিক দূরদর্শীতার যে দ্যুতি ছড়াতে শুরু করেছিল, তা পূর্ণতা পায় জীবনের অর্ধশতকে এসে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে। প্রাইমারিতে পড়ার সময় থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব গুণ কীভাবে কলকাতার বাংলা ভাষাভাষী জাতীয় নেতাদের দৃষ্টি কেড়েছিল, তার একটি বিশ্লেষণ তুলে ধরেন অধ্যাপক জাফর ইকবাল। ১৯৩৮ সালে বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জে গেলে স্কুলছাত্র মুজিবের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলার প্রসঙ্গও আসে জাফর ইকবালের বক্তৃতায়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু খুব সুচারুভাবে তার দায়িত্ব পালন করলেন। শুধু তাই নয়, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী যখন তার স্কুল পরিদর্শন করতে এলেন, তখন নাটকীয়ভাবে তার শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে পরিচয় হয়ে গেল। অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ সোহরাওয়ার্দী কিশোর বঙ্গবন্ধুকে দেখেই তার ভেতরে ভবিষ্যতের একজন রাজনীতিবিদকে আবিষ্কার করলেন। তিনি তার নাম-ঠিকানা নিয়ে গেলেন। তাকে চিঠি লিখে বললেন, কলকাতা গেলে তার সাথে দেখা করতে। তার ভেতর গুরুশিষ্যের বন্ধন শুরু হয়েছিল, সেটি এক সময় বন্ধুত্ব এবং ধীরে ধীরে রাজনৈতিক সহকর্মীতে রূপ নেয়।
কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক তৎপরতার একটি প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, কলকাতায় দাঙ্গা শুরু হলে মানুষকে বাঁচাতে বঙ্গবন্ধুর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। হিন্দু নয়, মুসলমান নয়, মানুষকে বাঁচাতে হবে। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, না খেয়ে, না ঘুমিয়ে, না বিশ্রাম করে পুরো এলাকা তিনি উল্কার মত ছুটে বেড়ালেন।
বঙ্গবন্ধুর জীবনকে নানাভাবে বিশ্লেষণ করা সম্ভব মন্তব্য করে জাফর ইকবাল বলেন, আমরা যদি তারুণ্যের রঙিন চশমা দিয়ে তার জীবনটা দেখি, তাহলে কী দেখব? দেখব, এই অসাধারণ মানুষটি আপাদমস্তক একজন তরুণ। তিনি হলেন সত্যিকারের তারুণ্যের একটি জলন্ত আলোকশিখা।
ভিডিও বার্তায় ফ্রান্সের ইন্টারপার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপ ফর সাউথ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট জ্যাকুলিন জেরোমেডি বলেন, ‘আজকে দেশ উন্নয়নের লক্ষ্যপূরণে যে অবস্থায় গেছে, জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান সেজন্য গর্বিত হবেন। অনেক চ্যালঞ্জ থাকা সত্ত্বেও প্রতিবছর বাংলাদেশে ২০ লাখ তরুণ কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছে। নতুন নতুন পণ্য নিয়ে নতুন নতুন বাজারে প্রবেশ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে। এখন বাংলাদেশকে আরও বেশি নারী কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নজর দেওয়া উচিত।’
তারুণ্যের পরিবেশনা : ‘তারুণ্যের আলোকশিখা’ থিমের সাংস্কৃতিক আয়োজনে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা থেকে শুরু করে গান, নাচ ও কোরিওগ্রাফি- সব কিছুতেই এদিন ছিলেন তরুণ প্রজন্মের শিল্পীরা। সাংস্কৃতিক আয়োজনের শুরুতে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। শিল্পীদের সঙ্গে বিভিন্ন গানে কণ্ঠ মেলাতেও দেখা যায় তাদের। অনুষ্ঠানে দর্শক সারিতে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, ঢাকায় জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। শুরুতে অডিও-ভিজ্যুয়াল পরিবেশনায় তরুণ মুজিবের লড়াইয়ের আখ্যান দেখানোর পর গান গেয়ে শোনান তরুণ শিল্পীরা।
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে নিবেদিত সাংস্কৃতিক আয়োজন নিয়ে এরপর মঞ্চে আসেন জাপানি দুই শিল্পীর মায়ে ওয়াতানাবে ও শুনসুকে মিজুতানি। জাপানি ভাষায় সংগীতের পাশাপাশি ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’ গানটি পরিবেশন করেন তারা।
তরুণ বঙ্গবন্ধুর লড়াইয়ের গল্প তুলে ধরে কোরিওগ্রাফি নিয়ে মঞ্চে আসেন পূজা সেনগুপ্ত ও তার দল। সবশেষে দুই প্রজন্মের শিল্পীদের মেলবন্ধনে ছিল মিশ্র সংগীতের পরিবেশনা। সাংস্কৃতিক আয়োজনের বিভিন্ন অংশে সঞ্চালনায় ছিলেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, অভিনেত্রী জয়া আহসান, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করে আলোচনায় আসা সেঁজুতি সাহা, পাঠাও-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মোহাম্মদ ইলিয়াস, এভারেস্টজয়ী নিশাত মজুমদার, জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের জাহানারা আলম এবং আন্তর্জাতিক শিশু পুরস্কার জয়ী সাদাত রহমান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটিকা নেওয়ার দুদিন পর করোনা আক্রান্ত পাক প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় পুকুরে ডুবে দুই বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু