মুক্ত হাওয়ার টানে সমুদ্র পাড়ে ছুটছে মানুষ

প্রাণচাঞ্চল্য ফিরছে কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রে

কক্সবাজার প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ৬:৪১ পূর্বাহ্ণ

করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ঘরবন্দি থাকা মানুষগুলো এখন যেন মুক্ত হাওয়ার সন্ধানে ছুটছে, যেখানে বুক ভরে নি:শ্বাস নেয়া যায়! করোনা সতর্কতায় ৫ মাস বন্ধ থাকা কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো গত ১৭ আগস্ট থেকে সীমিত পরিসরে চালু হলেও মূলত গত দুই সপ্তাহ ধরেই স্বরূপে ফিরেছে কক্সবাজার।
কক্সবাজারের হোটেল মালিকরা বলছেন, গত দুই সপ্তাহ ধরেই সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার এবং অন্যান্য দিনে গড়ে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার পর্যটক অবস্থান করছেন কক্সবাজার শহরে। এছাড়া আরো কয়েক হাজার পর্যটক ইনানী, হিমছড়ি ও টেকনাফের হোটেল-রিসোর্টে অবস্থান করেন। বর্ষাকালে বৈরি আবহাওয়ার কারণে বন্ধ থাকা কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটের জাহাজ চলাচল আগামী মাসের শেষদিকে ফের চালু হলে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নামবে বলে বলে আশা করছেন তারা।
বৃহস্পতিবার সকালে ও বিকালে সরেজমিন পরিদর্শনকালে কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ২ কি.মি সমুদ্র সৈকত জুড়ে নানা বর্ণের ও বয়সের শত শত পর্যটক দেখা যায়। কেউ উত্তাল ঢেউয়ের সাথে জলকেলিতে মাতছেন, কেউ বা সমুদ্রবাইকে চড়ছেন, কেউ কেউ চেয়ারে বা সৈকতের বালিতে বসে আড্ডা দিচ্ছেন, আর কেউ বা সৈকতের প্রাকৃতিক পথ ধরে মাইলের পর মাইল হেঁটে সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।
এসব পর্যটকের ভিড়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে কলাতলী সৈকতে কথা হয় পর্যটক সোহেল আহমদ ও নাজনীন আহমদ দম্পতির সাথে। সোহেল আহমদ একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রযোজক ও রাজধানীর মীরপুর এলাকার বাসিন্দা। স্ত্রী ও সন্তানের অনুরোধে বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন জানিয়ে সোহেল-নাজনীন বলেন, লকডাউনে দীর্ঘদিন ঘরে বন্দিজীবন কাটিয়ে একটু বুকভরে সতেজ নি:শ্বাস নেয়ার জন্য ৩দিনের ছুটি নিয়ে কক্সবাজারে ছুটে এসেছি। প্রথমদিন সমুদ্র সৈকত ও শহরেই ঘুরে কাটাব। শুক্রবার শহরের বাইরে হিমছড়ি-ইনানী ঘুরতে যাব। এরপর রামুসহ আশেপাশের এলাকা।একইদিন বেড়াতে আসা সিলেটের রিপন ও রুবিনা জীবনে প্রথমবারের মতো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখেছেন জানিয়ে বলেন, আমাদের পরিকল্পনা হল হেঁটে হেঁটে সমুদ্র সৈকত ও আশেপাশের জনপদ দেখা। প্রথমদিন আমরা যতটুকু দেখেছি বিমোহিত হয়েছি।হোটেল মালিকদের সংগঠন ‘ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স এসোসিয়েশন বাংলাদেশ, কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, লকডাউনে দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকা মানুষগুলো এখন যেন মুক্ত হাওয়ার সন্ধানে, বুক ভরে নি:শ্বাস নিতে কক্সবাজার সাগরপাড়ের দিকে ছুটছে। তবে এখন একটি কক্ষে গাদাগাদি করে অতিরিক্ত পর্যটক থাকার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাপল বেড ও টু-ইন বেডে সর্বোচ্চ ২ জন অবস্থান করতে পারছেন। সে হিসেবে কক্সবাজার শহর ও শহরতলীর চার শতাধিক হোটেল- মোটেল ও গেস্ট হাউসে একদিনে সর্বোচ্চ ৮২ হাজার পর্যটক রাত যাপন করতে পারবেন, করোনার আগে এই সক্ষমতা ছিল দ্বিগুণ।
তিনি বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে ছুটির দিনে কক্সবাজারের হোটেলগুলোর প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ কক্ষ ভাড়া হয়ে যাচ্ছে। সপ্তাহের অন্যান্য দিনেও শতকরা ২০ থেকে ৫০ ভাগ কক্ষ ভাড়া হচ্ছে। আশা করছি, আগামী মাসের শেষদিকে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটের জাহাজ চলাচল চালু হলে কক্সবাজারে পর্যটকদের থাকার জায়গা পাওয়াও কষ্টকর হবে।
একই ধরনের আশা করছেন, কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান এমএ হাসিব বাদল। তিনি বলেন, বর্ষাকালে বৈরি আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় এখন বেশিরভাগ পর্যটক দুই রাতের জন্যই কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। আগামী মাসের শেষদিকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল ফের শুরু হলে বেশিরভাগ পর্যটক টানা ৩/৪ দিন, এমনকি কেউ কেউ সপ্তাহকাল পর্যন্ত কক্সবাজারে অবস্থান করবেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের হোটেল মালিকসহ অন্যান্য পর্যটন ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট বলে জানান কক্সবাজার হোটেল অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক করিমউল্লাহ।
তিনি বলেন, করোনার কারণে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প দৈনিক প্রায় ১০ কোটি টাকা করে লকডাউনের পাঁচ মাসে অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছে। পর্যটন শিল্প নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত ২০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী হয়ে পড়ে বেকার। এদের পাশাপাশি কর্মহীন হয়ে পড়া হকার, দোকানের কর্মচারীসহ পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভরশীল প্রায় ১ লাখ মানুষ তাদের জীবিকা ফিরে পেয়েছে।
উল্লেখ্য, করোনা সতর্কতায় গত ১৮ মার্চ থেকে সমুদ্র সৈকতসহ কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে কক্সবাজার জেলাকে লকডাউন, শহরকে রেডজোন ঘোষণা করে সকল ধরনের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ সাড়ে ৩ মাস পর গত ১ জুলাই থেকে লকডাউন শিথিল করে কক্সবাজার শহরের দোকানপাট খুলে দেয়া হলেও পর্যটন কেন্দ্রগুলো সীমিত পরিসরে চালুর অনুমতি দেয়া হয় গত ১৭ আগস্ট থেকে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, মহামারি করোনা এখনও দূর হয়ে যায়নি। তাই পর্যটকদের জন্য সীমিত পরিসরে কক্সবাজার পৌরসভার দর্শনীয় স্থানসমূহ খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর শিথিলতা বা কঠোরতা ভবিষ্যত করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনতুন একটা শুরুর প্রতীক্ষা
পরবর্তী নিবন্ধবিআরটিএ’র অভিযানে ৫৯ হাজার টাকা জরিমানা