মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তা, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ

২ সমর্থককে বহিষ্কার করল জামায়াত

| মঙ্গলবার , ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে হেনস্তার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর এক বার্তায় বলেছে, চৌদ্দগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইকে মানহানির ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় দলটির কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগের মধ্যে দুজন সমর্থককে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।

গত রোববার দুপুরে বাড়ির পাশের গ্রামে ৭৮ বছর বয়সী কানুকে একা পেয়ে স্থানীয় অন্তত ২০ ব্যক্তি তার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়। তাদেরই একজন ঘটনার ভিডিও করে, যেটি ছড়িয়েছে ফেসবুকে। এতে দেখা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা কানুর হাত ধরে সামনে নিয়ে যাচ্ছেন দুই ব্যক্তি। এসময় তার গলায় রশি দিয়ে বাধা কয়েকটি জুতা দেখা যায়। তার আশপাশে ঘিরে ছিল আরো জনা পনের লোক। একপর্যায়ে কানু জুতার মালা সরিয়ে এলাকায় থাকার আকুতি জানালেও তাকে এলাকা ছাড়ার হুমকি দিতে থাকেন ঘিরে থাকা লোকজন। খবর বিডিনিউজের।

ওই ব্যক্তিদের একজনকে বলতে শোনা যায়, এক গ্রাম লোকের সামনে মাফ চাইতে পারবেন কিনা? তখন কানুকে দুই হাত উপরে তুলে মাফ চাইতে দেখা যায়। ঘটনার পর অসুস্থ অবস্থায় ওই মুক্তিযোদ্ধাকে ফেনীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বলছে, আমরা সকলকে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে হেনস্তার ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দুষ্কৃতিকারী সব জায়গায় রয়েছে। যারা তাকে হেনস্তা করেছে, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসব।

২ সমর্থককে বহিষ্কার : বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় দুই সমর্থককে বহিষ্কার করেছে জামায়াতে ইসলামী। গতকাল রাতে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা শাখার আমির মু. শাহজাহান, সেক্রেটারি সরওয়ার উদ্দিন ছিদ্দিকী এবং চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আমির মু. মাহফুজুর রহমান, সেক্রেটারি মু. বেলাল হোসাইনের যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বহিষ্কৃত সমর্থকরা হলেন উপজেলার কুলিয়ারা গ্রামের মৃত আবদুল বারেকের ছেলে মু. আবুল হাশেম এবং মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে মু. অহিদুর রহমান।

স্থানীয়রা বলছেন, মুক্তিযোদ্ধা কানু কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মুজিবুল হকের রোষানলে পড়ে বিগত ৮ বছর এলাকায় যেতে পারেননি। বাড়িঘরে হামলা করাসহ একাধিক মামলা দেওয়া হয় ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে। তিনি লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনার জন্য মুক্তিযোদ্ধা কানুর পরিবার স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর সদস্যদের দায়ী করলেও দলটি নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে। এর মধ্যে গতকাল মুক্তিযোদ্ধার ছেলে গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া বিপ্লব সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কুলিয়ারা গ্রামের আব্দুল বারিকের ছেলে জামায়াত সমর্থক আবুল হাশেম মজুমদারের নেতৃত্বে আমার বাবাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। ওখানে যারা ছিল সবাই জামায়াতশিবিরের নেতাকর্মী।

জামায়াতে ইসলামী যে দুজনকে বহিষ্কার করেছে তার মধ্যে আবুল হাসেম রয়েছেন। দলটির পক্ষ থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে লাঞ্ছনার ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ বর্ণনা করে নেতারা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এতে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। জামায়াতে ইসলামী শুধু বীর মুক্তিযোদ্ধা নয়, দেশের সাধারণ কোনো নাগরিককেও হেনস্তা করা সমর্থন করে না। এই দুঃখজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িতদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের হাতে সোপর্দ করার জন্য আমরা সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।

নেতারা বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা জামায়াতে ইসলামীর কোনো পর্যায়ের নেতা বা কর্মী নয়। জামায়াতে ইসলামীর কোনো পর্যায়ের নেতা বা কর্মী আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কোনোভাবেই সমর্থন করে না এবং প্রশ্রয় দেয় না। এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের শাস্তি দাবি করছি এবং জামায়াতে ইসলামীর শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও ভাবমর্যাদার ক্ষুণ্ন করায় সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও তাদের জামায়াতে ইসলামী থেকে বহিষ্কার ঘোষণা করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলিয়াকত আলী লাকীসহ ২৪ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পরবর্তী নিবন্ধবেসরকারি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের কর্মবিরতি