মীর হেলালের গাড়িবহরে ছাত্রদলের পদবঞ্চিতদের হামলা

অভিযোগ শাকিলা ও ফজলুল হকের বিরুদ্ধে

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৪ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:১২ পূর্বাহ্ণ

হাটহাজারী উপজেলা ছাত্রদলের পদবঞ্চিতরা হামলা করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলালের গাড়িবহরে। গতকাল বিকেল তিনটার দিকে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়কের ফাতেয়াবাদে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না দাবি করে মীর হেলাল হামলার জন্য উত্তর জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির সদস্য শাকিলা ফারজানা ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এস.এম. ফজলুল হককে দায়ি করেছেন। তবে দুজনই নিজেদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। শাকিলা ফারজানা দাবি করেছেন, পদবঞ্চিতরা বিক্ষোভ করার সময় তাদের প্রতি মীর হেলালের গাড়িবহর থেকে গুলি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, ছাত্রদল ও বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, সকালে হাটহাজারী উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি’র এক মতবিনিময় সভায় যোগ দেন মীর হেলাল। তার সঙ্গে প্রায় অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেলের একটি বহর ছিল। বিকেল তিনটার দিকে বায়েজিদে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য ফিরছিলেন তিনি। এসময় ফতেয়াবাদ এলাকায় আগে থেকে অবস্থানরত উপজেলা ছাত্রদলের পদবঞ্চিতরা তার গাড়ি বহরে হামলা করে। এক পর্যায়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী উপজেলা বিএনপি’র এক নেতা জানিয়েছেন, দুই পক্ষ পরস্পরকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। লাটিসোটা দেখা গেছে তাদের হাতে। কয়েকটা গাড়ির কাঁচ ভাঙা হয়েছে। এসময় দুই-তিন রাউন্ড গুলির শব্দে শুনা গেছে। কয়েকজন আহতও হয়েছেন।
হাটহাজারী থানার ওসি মাসুদ আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ঘটনা শুনার সাথে সাথে ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠিয়েছি। কিন্তু সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি।
ঘটনার বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমি বাড়ি গিয়েছিলাম, আমার সাথে ২০০/২৫০ মোটরসাইকেল করে ছেলেরা গিয়েছিল। বায়েজিদে প্রোগ্রাম থাকায় আমি আগে চলে আসি। পরে খবর পেলাম শাকিলা ফারজানার ৮/১০ জন ও ফজলুল হকের কিছু ছেলে ওদেরকে (মোটরসাইকেল বহর) আটকানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু প্রতিরোধের মুখে তারা পালিয়ে যায়। বায়েজিদে এসে এঘটনা আমি শুনেছি। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের নাম সংগ্রহ করে কেন্দ্রে দেয়া হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঘটনায় কেউ আহত হয়েছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কেউ আহত হয়নি, ওদের তিন-চারজন হতে পারে।
কিন্তু একটি পক্ষ বলছে ছাত্রদলের পদবঞ্চিতরা ক্ষোভ থেকে হামলা করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মীর হেলাল বলেন, কিসের জন্য ঘটনা সেটা জানি না। কিন্তু ঘটনা একটা হয়েছে সেটা জানি। এদের সবাইকেই তো পদ দেয়া হয়েছে। এখন যারা বঞ্চিত হয়েছে বলছে, তারা এতই বঞ্চিত হলে পদত্যাগ করলেই পারে। সেটা তো করে না। উপজেলা কমিটিতে ওদের পাঁচজন যুগ্ম আহবায়ক ও তিনজন সদস্য আছে।
এবিষয়ে উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য লন্ডনে অবস্থানরত ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা মুঠোফোনে দৈনিক আজাদী বলেন, ছাত্রদলের পদবঞ্চিতরা বিক্ষোভ করেছে। তাদের উপর উনার (মীর হেলাল) গাড়ি থেকে গুলি করা হয়েছে। কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকতে পারে, তাই বলে নিজ দলের ছেলের উপর গুলি করবে। এটা কেমন কথা।
‘মীর হেলালের দাবি, আপনার লোকজনই হামলা করেছে।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাকিলা ফারজানা বলেন, পদবঞ্চিতরা বিক্ষোভ করেছে। এখন তারা কেন বিক্ষোভ করেছে সেটা খবর নিলেই তো হয়।
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এস.এম. ফজলুল হক দৈনিক আজাদীকে বলেন, কি ঘটেছে সে বিষয়ে আমি অবগত নই। সে (মীর হেলাল) তো আমার সন্তানতুল্য। রাজনৈতিকভাবেও আমার প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। তাহলে আমি কেন বিদ্বেষ পোষণ করবো?
হাটহাজারী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সোলাইমান মঞ্জু দৈনিক আজাদীকে বলেন, পদবঞ্চিতদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এ ধরনের ঘটনা আমরা সাপোর্ট করি না। হাটহাজারী উপজেলা বিএনপি থেকে এটার নিন্দা জানাই। উত্তর জেলা যুবদলের সাবেক এই সম্পাদক বলেন, যারা পদবঞ্চিত তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়ন করা উচিত। সবাইকে নিয়ে কমিটি করলে দলই সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হবে।
উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল আলম জনি দৈনিক আজাদীকে বলেন, হামলার কোন ঘটনা ঘটেনি। আমরা নিজেরাই তো ওনাকে (মীর হেলাল) রিসিভ করে এনেছি এবং পৌঁছে দিয়েছি। আসলে অনেকগুলো মোটর সাইকেল ছিল এবং এরমধ্যে একটা গাড়ি স্লিপ করে। বিষয়টাকে হামলার ঘটনা বলা হচ্ছে।
পদবঞ্চিতদের বিক্ষোভ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাত্র ২১ জনের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে তো সবাইকে স্থান দেয়া সম্ভব না। সামনে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে সেখানে যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হবে। তাছাড়া সবার বায়োডাটা সংগ্রহ করে আমরা কেন্দ্রে জমা দিয়েছিলাম। কেন্দ্র সেগুলো যাচাই-বাছাই করে যারা যোগ্য তাদের কমিটিতে রেখেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৫ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী উপজেলা ও পৌরসভা, হাটহাজারী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হয় নি দাবি করে এজন্য মীর হেলালকে দায়ি করে পরদিন থেকে বিক্ষোভ করে আসছে পদবঞ্চিত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচাকরির প্রলোভনে গৃহবধূ গণধর্ষণ মামলার আসামি গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধফোনে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না ওসি প্রদীপ