এবছর মধুমাস জ্যৈষ্ঠ এলেও ফলের বাজারে কিছুটা মন্দাভাব লক্ষ্য করা গেছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রা, কাল বৈশাখীর ছোবল ও শিলা বৃষ্টির কারণে এবার মীরসরাইয়ে আম ও কাঁঠালের ফলন ভালো হয়নি। এর প্রভাবও পড়েছে বাজারে। তবে এই প্রতিকূলতা কাটিয়ে জমে উঠছে মীরসরাই উপজেলার আম ও কাঁঠালের হাট বলে পরিচিত করেরহাট। কিন্তু হাটে আগের বছরগুলোর মতো নেই কাঁঠাল ও আম। অধিকাংশ আমে পোকা ও নষ্ট হওয়ায় আম কম থাকার কথা জানান বিক্রেতারা।
করেরহাট বাজারের জনৈক আম বিক্রেতা ফখরুল আলম বলেন, গত বছর এ সময় কয়েক হাটেই ৪০–৫০ হাজার টাকার আম বিক্রি করেছি। এবার ১০ হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারি নাই। কিন্তু আমার বাগানের জন্য নেওয়া ৩০ হাজার টাকার কর্জ রয়েছে। শিলা বৃষ্টি হওয়ায় অনেক আম ঝরে গেছে। আবার গরম বেশি হওয়ায় পোকা ও গাছেই আম নষ্ট হয়ে গেছে।
উপজেলার মিঠাছরা, বারৈয়ারহাট, জোরারগঞ্জ, বড়তাকিয়া, বড়দারোগারহাটে ও কমবেশি ফল পাইকারি ও খুচরা বিক্রয় হলেও এবার তাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ভৌগোলিকভাবে বিস্তীর্ণ পাহাড়ি জনপদ মীরসরাইয়ের করেরহাটের পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর মৌসুমী ফল আম, কাঁঠাল, জাম, আনারস, লেবু, পেয়ারার জন্য এই বাজারের সুখ্যাতি রয়েছে। মীরসরাইয়ের সর্ব উত্তরে অবস্থিত এই বাজারে সপ্তাহে দুইদিন রবি ও বুধবার বসে আম ও কাঁঠালের হাট। প্রতি হাটবারে এ বাজারে দশ লক্ষাধিক টাকার ফলের কেনাবেচা হয়। ফেনী, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা আসে নানান মৌসুমী ফল ক্রয়ের উদ্দেশ্যে। সড়কপথে যোগাযোগ ও তুলনামূলক কম দামে পাইকারি ক্রয় বিক্রয় হয় বলে করেরহাটে মৌসুমী ফলের হাট জমজমাট হয়।
মীরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের বড় একটি অংশ উঁচু নিচু টিলা আর পাহাড়বেষ্টিত বলে এসব ফল সহজে চাষাবাদ হয়। এর মধ্যে গ্রীষ্মকালীন নানা জাতের ফল চাষাবাদ, বাজারজাত ও বিক্রয়ের অন্যতম একটি স্থান হলো মীরসরাই উপজেলার করেরহাট বাজার। এক সময় সীমিত আকারে করেরহাট ও এর আশপাশের এলাকায় আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, জাম্বুরাসহ নানা জাতের মৌসুমী ফল উৎপাদন করা হতো। এখন এসব এলাকার সর্বত্রই আর্থিক উপার্জনের কথা ভেবেই বসতবাড়ির আঙিনা, খোলা পতিত জমি ও খাস জমিতে ফল চাষাবাদ করা হচ্ছে। এভাবে করেরহাট এলাকায় বেশ কয়েকটি ব্যক্তিমালিকানাধীন ফলের বাগান গড়ে উঠেছে। এসব বাগানে বানিজ্যিকভাবে প্রচুর পরিমাণে আম, কাঁঠাল, আনারস, লিচু, পেয়ারা, পেঁপে, ইত্যাদি চাষাবাদ করে বছরে প্রচুর পরিমাণে আয় করা হচ্ছে।
মীরসরাই উপজেলা কৃষি সুপারভাইজার কাজী নুরুল আলম বলেন, এখানকার কৃষকরা বিষমুক্ত ফলই ফলান সব সময়। কিন্তু এবার প্রতিকূল প্রাকৃতিক আবহাওয়া, অতিরিক্ত তাপ ও শিলাবৃষ্টির জন্য কৃষকরা সংকটে পড়েছে। তাই এবার লাভের মুখ দেখবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।