মিয়ানমারে গ্রামে গ্রামে হত্যাযজ্ঞ

বিবিসির অনুসন্ধানে নতুন ঘটনা উদঘাটন

| মঙ্গলবার , ২১ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গত জুলাই মাসে কয়েকটি গ্রামে ধারাবাহিক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, যেখানে অন্তত ৪০ জনকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে বলে উঠে এসেছে বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে। প্রত্যক্ষদর্শী এবং বেঁচে যাওয়া কয়েকজনকে উদ্ধৃত করে বিবিসি বলেছে, সেনাবাহিনীর সদস্যরা গ্রামের বাসিন্দাদের এক জায়গায় জড়ো করার পর পুরুষদের আলাদা করে ফেলে, তারপর তাদের হত্যা করা হয়। খবর বিডিনিউজের।
এসব ঘটনার অনুসন্ধানে যেসব ভিডিও ও ছবি মিলেছে, তাতে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে হত্যা করার আগে নির্যাতন চালানো হয়। তারপর মাটিতে গর্ত খুঁড়ে পুঁতে ফেলা হয় তাদের লাশ। বিবিসি লিখেছে, জুলাই মাসে মধ্য মিয়ানমারের সাগাইং জেলার কানি শহরের কাছে এ রকম চারটি হত্যাযজ্ঞ চলে। ওই এলাকাটি বিদ্রোহীদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। গত ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতার দখল নেওয়ার পর থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে বেসামরিক নাগরিকদের বিক্ষোভ ও প্রতিরোধ সামাল দিতে হচ্ছে।
বিবিসি লিখেছে, কানি এলাকার ১১ প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিও ও ছবির সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছে তারা। ওই ভিডিও ও ছবিগুলো সংগ্রহ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি এনজিও, যারা মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধান করছে। সবচেয়ে বড় হত্যাযজ্ঞটি চালানো হয় কানি এলাকার ওইন গ্রামে। সেখানে অন্তত ১৪ জন পুরুষকে পিটিয়ে অথবা নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরে তাদের লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছে জঙ্গলের ভেতরে পাহাড়ি খাদের মধ্যে।
ওই এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, সেনা সদস্যরা ওই লোকগুলোকে হত্যা করার আগে দড়ি দিয়ে বেঁধে পিটিয়েছে। ওই গ্রামের এক নারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে বিবিসি, যার ভাই, ভাতিজা এবং দেবরকে সেনা সদস্যরা হত্যা করেছে।
তিনি বলেছেন, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওই দৃশ্য সহ্য করা সম্ভব ছিল না। আমরা মাথা নিচু করে রেখেছিলাম, কাঁদছিলাম। আমরা বার বার ওদের প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছি, তারা আমাদের কথা কানে তোলেনি। তারা মেয়েদের বলছিল, এর মধ্যে কি তোমাদের স্বামী আছে? যদি থাকে তাহলে শেষ বিদায় নিয়ে নাও।
সৈন্যদের হাত থেকে পালিয়ে বেঁচে যাওয়া একজন বলেছেন, তার সাথে অন্য যাদের আটক করা হয়েছিল, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে। তাদের বেঁধে রেখে পাথর ছোড়া হয়েছে, রাইফেলের কুঁদো দিয়ে মেরেছে। এই অত্যাচার চলেছে সারা দিন ধরে।
বেঁচে যাওয়া ওই ব্যক্তি বলেছেন, হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া সেনা সদস্যদের কেউ কেউ তরুণ, ১৭-১৮ বছর বয়সীরাও আছে। কেউ কেউ আবার অনেক বয়স্ক। তাদের সঙ্গে এক নারীকেও তিনি দেখেছেন।
বিবিসি লিখেছে, ইয়িন গ্রামের কাছেই জি বিন ডুইন গ্রামে জুলাইয়ের শেষ দিকে একটি গণকবরে ১২টি বিকৃত লাশ মাটি চাপা অবস্থায় পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি শিশু এবং এক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মৃতদেহও ছিল। পাশেই একটি বরইগাছের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় পাওয়া ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তির লাশ। তার মৃতদেহের ভিডিও পর্যালোচনা করে নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন দেখা গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসেকান্দর হোসেন মিয়ার ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
পরবর্তী নিবন্ধদাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকলে খাবারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে