মিয়ানমারের যুদ্ধবিমানের গোলা পড়ল ঘুমধুম সীমান্তে

ওপারে সংঘর্ষ, গোলাগুলি, রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হবে আজ

বান্দরবান প্রতিনিধি | রবিবার , ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

মর্টার শেলের পর এবার মিয়ানমার থেকে যুদ্ধবিমানের দুটি গোলা এসে পড়ল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে। মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধবিমান ও দুটি ফাইটিং হেলিকপ্টার বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে গোলাবর্ষণ করেছে। গতকাল শনিবার সকালে এসব যুদ্ধবিমান হানা দেয় বলে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন বান্দরবানের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম। তবে এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় আজ রোববার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হচ্ছে। এসপির বিবৃতিতে বলা হয়, শনিবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটের দিকে ঘুমধুম ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রেজু আমতলীর বিজিবির বিওপির (সীমান্ত চৌকি) আওতাধীন সীমান্ত পিলার ৪০ ও ৪১ নম্বরের মাঝামাঝি এলাকায় ঢুকে পড়ে এসব যুদ্ধ বিমান। এর আগে গত ২৮ আগস্ট দুপুরে ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার থেকে দুটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল এসে পড়ার পর দেশটির রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছিল ঢাকা।
বিবৃতিতে বলা হয়, এ সময় যুদ্ধবিমান থেকে আনুমানিক ৮ থেকে ১০টি গোলা এবং হেলিকপ্টার থেকে ৩০ থেকে ৩৫টি ফায়ার করতে দেখা গেছে। যুদ্ধবিমান থেকে ফায়ার করা দুটি গোলা ৪০ নম্বর সীমান্ত পিলারের ১২০ মিটার বরাবর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়ে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের তুমব্রু সীমান্ত পিলার ৩৪ ও ৩৫ নম্বর এলাকায় মিয়ারমানের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) রাইট ক্যাম্প থেকে ভারী অস্ত্রের ফায়ার এখনও চলমান রয়েছে। এছাড়া মুরিঙ্গাঝিরি ও রাইট ক্যাম্প থেকে থেমে থেমে মর্টার ফায়ারও অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন ধরে মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা চলছে। মূলত সেটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে। যুদ্ধবিমানের গোলা পড়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি সতর্কতার সাথে দেখছি। পুলিশের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সীমান্তবাসীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তাদেরকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে সীমান্তবাসীর দাবি, ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের পাহাড়ি এলাকায় মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় আরাকান আর্মির সদস্যদের অবস্থান নির্মূল করতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী কয়েক দিন ধরে হামলা চালাচ্ছে। মূলত সীমান্তের ওপারে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনাগুলো ঘটছে।

ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, যুদ্ধবিমানের দুটি গোলা এসে পড়েছে সীমান্তের ৪০ ও ৪১ নম্বর সীমান্ত পিলার এলাকায়। ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিও পড়েছে সীমান্ত এলাকায়। মিয়ানমারের মুরিঙ্গাঝিরি বিজিপি ক্যাম্পে ও তুমব্রু বিজিপি রাইট ক্যাম্প থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের আস্তানা লক্ষ্য করে থেমে থেমে মর্টার শেলের ফায়ার করা হয়েছে। গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। গুলির শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ঘুমধুম, তুমব্রু, রেজু, আমতলী সীমান্ত অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে। বিজিবির পক্ষ থেকে সীমান্তবাসীদের আতঙ্কিত না হতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, সীমান্তের নিরাপত্তায় বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্কাবস্থায় রয়েছে।
বিডিনিউজ জানায়, বিজিবি পরিচালক (অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান ঢাকায় বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।
রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হচ্ছে : বাংলানিউজ জানায়, সীমান্তে গোলা ছোড়ার ঘটনায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ অং কিয়াউ মোকে আজ আবারও তলব করা হচ্ছে। গতকাল পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মিয়ানমার সীমান্তের ঘটনায় বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে আগামীকাল (আজ) তলব করা হবে। এ ঘটনায় কড়া প্রতিবাদ জানানো হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাতীয় সড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬