ভারতের বিপক্ষে অনেক ম্যাচেই বাংলাদেশ তীরে এসে তরী ডুবিয়েছে। এবারও তেমন সম্ভাবনাই জেগেছিল। নিশ্চিত খেলাকে অনিশ্চিয়তায় নিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ১৩৬ রানের মাথায় পড়ে যায় ৯ম উইকেট। তখনও প্রয়োজন ৫১ রান। উইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রতিষ্ঠিতরা বিদায় নিয়েছেন। মিরাজের সঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু বিস্ময়কে হার মানিয়েছেন তারা। মেহেদী হাসান মিরাজ বিস্ময়কর ব্যাটিং করলেন। মোস্তাফিজুর রহমানকে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে রেখে সিঙ্গেল না নিয়ে তিনি বাংলাদেশকে জয়ী করে মাঠ ছাড়ার মরণপণ সংগ্রাম শুরু করেন। এরই মধ্যে লোকেশ রাহুল ফেলে দিয়েছিলেন মিরাজের একটি ক্যাচ। ম্যাচের মোড়ও ঘুরে গিয়েছিলো তখন বলা যায়। এরপর মিরাজ খেললেন অতিমানবীয় ইনিংস এবং যোগ্য সঙ্গ দিলেন তাকে মোস্তাফিজুর রহমান। সে সঙ্গে ইতিহাসের সেরা একটি ম্যাচ জয় করে নিলো বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে ১ উইকেটের এই জয়টি লেখা হয়ে যাবে ইতিহাসের পাতায়। ৩৯ বল খেলে মিরাজের করা ৩৮ রানের ইনিংসটি শত সেঞ্চুরির চেয়েও মূল্যবান।
১২৮ থেকে ১৩৬- এই ৮ রানের ব্যবধানে বাংলাদেশের ৫ উইকেটের পতন ঘটে। তখনও জয় থেকে ৫১ রান দূরে বাংলাদেশ। অতিবড় বাংলাদেশ সমর্থকও তখন দুঃস্বপ্নে বিশ্বাস করার কথা নয় যে, বাংলাদেশ জিতবে। এমন পরিস্থিতিতে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেন মিরাজ। মোস্তাফিজকে নন স্ট্রাইকপ্রান্তে দাঁড় করিয়ে রেখে দেন শুধু উইকেটটা টিকিয়ে রাখার জন্য। এমন অবস্থায় কুলদিপ সেনকে এক ওভারে দুটি ছক্কা মেরেই ম্যাচের গতি বদলে দেন। চুপ চাপ হয়ে যাওয়া মিরপুরের গ্যালারিতে প্রাণের সঞ্চার করেন।
শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৮৬ রান করে ভারত। জবাব দিতে নেমে ২৪ বল হাতে রেখে জয় পায় টাইগাররা। অধিনায়কত্বের উদ্বোধনী দিনে টস ভাগ্য সহায় হয় লিটন দাসের। বাংলাদেশের ১৫তম অধিনায়ক আগে ফিল্ডিং বেছে নেন। এ ম্যাচে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফাইফার পূর্ণ হয় সাকিবের। বাংলাদেশের পক্ষে ১০ ওভারে ২ মেডেনসহ ৩৬ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নেন সাকিব। ৮ ওভার দুই বল হাত ঘুরিয়ে ৪৭ রান দিয়ে চার উইকেট পেয়েছেন এবাদতও। বাকি উইকেটটি মেহেদী হাসান মিরাজের। অল্প রানের লক্ষ্য। বাংলাদেশের ব্যাটারদের জন্য জরুরি ছিল কেবল উইকেটে টিকে থাকা।
কিন্তু সেটিও করতে পারলেন না তারা। ইনিংসের প্রথম বলেই শূন্য রানে ফেরত গেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দ্বীপক চাহারের অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরের বলে স্লিপে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরত যান উদ্বোধনী ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারের প্রথম বলেই দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মিডউইকেটে ওয়াশিংটন সুন্দরের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিজয় ফেরেন মোহাম্মদ সিরাজের বলে। ২ চারে ২৯ বলে ১৪ রান করেন তিনি।
সাকিব আল হাসান ও লিটন দাসের ৪৮ রানের জুটি এগোচ্ছিল ধীরে ধীরে। কিন্তু হুট করেই সাদামাটা আউট হয়ে যান লিটন। সুন্দরের টার্ন করা বল গ্লাভসে লাগে তার। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৬৩ বলে ৪১ রান করে সাজঘরে ফেরত যান লিটন। কিছুক্ষণ পর আউট হয়ে যান সাকিবও। এরপর শার্দুল ঠাকুরের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৩৫ বল খেলেও কোনো বাউন্ডারি না হাঁকিয়ে কেবল ১৪ রান করেন তিনি। এরপর ৪৫ বলে ১৮ রান করা মুশফিক ফেরেন মোহাম্মদ সিরাজের বলে ইনসাইড এজে বোল্ড হয়ে। তার ব্যাট থেকেও কোনো বাউন্ডারি আসেনি। ১২ বলে ৬ রান করা আফিফ হোসেনের দারুণ এক ক্যাচ ধরেন মোহাম্মদ সিরাজ। এরপর হার ছিল নিয়তি। কিন্তু মিরাজ হাল ধরেন তখন। মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে গড়েন ৫১ রানের জুটি। বাংলাদেশের হয়ে শেষ উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ।