আসলে মায়ের সাথে গল্প করার মজাই আলাদা। সেদিনও মায়ের সাথে গল্প করছিলাম। গল্প করতে করতে এক পর্যায়ে গিয়ে মা জানতে চাইলো, সদ্য নষ্ট হওয়া ফোনটি কোথায়? জবাবে আমি বললাম হয়তো ব্যাগের এক কোণায় পড়ে আছে। ‘মা’ তখনি শুরু করলো বর্তমান সময়ে ঘটে, এমন বিষাদে ভরা কিছু কথা। ‘মা’ বলতে শুরু করলো, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে সন্তানদের কাছে তাদের পিতা-মাতা এতই বোঝা হয়ে গেছে, বুড়ো বয়স হলে তাদের অবস্থা কি রকম হয় জানিস? আমি জানতে চাইলাম- কি রকম? ‘মা’ বললো তোর ব্যাগের কোণায় পড়ে থাকা পরিত্যক্ত ফোনটির মতো? যেটা পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রম দেখায়। আমি বললাম; তা কেমনে হয়? সুন্দর উদাহরণ দিয়ে ‘মা’ বুঝিয়ে দিলো, এই দ্যাখ-আমি তোর মা, এখনো নড়তে-চড়তে পারি। তোদের কাছে আমার মূল্য অনেক বেশি। আমার সাথে এসে গল্প করছিস। তোদের রান্না করে খাওয়াচ্ছি, তোদের যখন যা প্রয়োজন তা করে দিচ্ছি।
কিন্তু এক সময় গিয়ে আমি বুড়ো বয়সে উপনীত হবো। তখন তোদেরকে এই সময়ের মতো কিছুই করে দিতে পারবো না। বুড়ো বয়সে হয়তো আমার সাথে আর তেমন গল্পও করতে আসবি না। বয়সের ভারের কারণে তোদের জন্য রান্নাটা তখন আর করা হবে না। আমার মূল্যটা তখনি কমে যাবে। পড়ে থাকবো ঘরের এক কোণায় তোর পরিত্যক্ত ফোনটির মতো। ঐ ফোনটিও একসময় তোর কাছে খুব মূল্যবান ছিলো, যখন ফোনটি তোকে ভালো সার্ভিস দিচ্ছিলো! আর যখনি পরিত্যক্ত হয়ে তোকে সার্ভিস দিতে পারছে না, তখন তোর কাছে ফোনটি মূল্যহীন হয়ে গেলো। ফেলে রাখলি ব্যাগের এক কোণায়।
দীর্ঘদিন ব্যবহারে পরিত্যক্ত হয়ে ফোনটি দেখলো ব্যাগের কোণা। আর বয়স বেড়ে অবশ হয়ে পিতা-মাতা দেখে বৃদ্ধাশ্রম। এই হলো বর্তমান সময়ে সন্তানদের কাছে পিতা-মাতার মূল্য। আর মাকে আমি সেদিন বলেছিলাম, আমি অন্য সবার মতো হবো না! তুমি বুড়ো বয়েসে উপনীতে হলেও, তোমাকে আগের মতোই ভালোবাসবো! তোমার পাশে গিয়ে বসে এই সময়ের মতো গল্প জুড়িয়ে দিবো।
বিশ্ব মা দিবসে একটাই প্রত্যাশা, মায়ের প্রতি ভালোবাসা শুধু মা দিবেসে সীমাবদ্ধ না থেকে, মায়ের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হোক প্রতিদিন। মাকে ছেড়ে দূর প্রবাসে অথবা অন্য কোথাও থাকলে, অন্তত প্রতিদিন একটা মিনিট ব্যয় করে ফোন দিয়ে খবর নিই, মা খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো করতেছো , ঔষধ ঠিক মতো খাচ্ছো?