মারুফের সঙ্গে চলে গেল তার মায়ের স্বপ্নও। ইকবাল হোসেন মারুফের বাবার বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার মাদার্শা এলাকায়। শুরু থেকেই মা কামরুন নাহারের সঙ্গে স্বামীর বনিবনা ছিল না। মারুফ প্রথম সন্তান। এরপর যমজ ছেলে-মেয়ের জন্ম। তিন সন্তান জন্মের পর মারুফের বাবা আরেকজনকে বিয়ে করে ঘরে এনে কামরুন নাহারকে তাড়িয়ে দেন। তিন সন্তান দিয়ে কামরুনের ঠাঁই হয় খন্দকিয়া গ্রামের বাবার বাড়িতে। অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে ছেলেকে বড় করছিলেন। এসএসসি পরীক্ষার পর মারুফ সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দেবে, এমন একটি প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্তও হয়েছিল। কামরুনের বড় আশা ছিল, বড় ছেলে উপার্জন শুরু করলে অভাব ঘুচবে, ছোট দুই সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করবেন। কিন্তু মারুফের কবরের সঙ্গে কবর হয়েছে কামরুনের স্বপ্নেরও।
গতকাল শনিবার সকালে মারুফের নানার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা কামরুন নাহার ও নানী নুরুন নাহার বিলাপ করছেন। তাদের সান্ত্বনা দিতে আসা মানুষগুলোর চোখেও অঝোর ধারায় ঝরছে পানি। কামরুন কাঁদছিলেন আর বলছিলেন, ‘আল্লাহ আমার এত বড় সর্বনাশ কেন হল?’ তিনি বিলাপ করতে করতে বারবার মায়ের বুকে আছড়ে পড়ছিলেন।
নানী নুরুন নাহার বলেন, আজ ১৩ বছর হয়েছে আমার মেয়েকে স্বামী তালাক দিয়েছে। আমরা মেয়েকে আবার বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মারুফ বাধ সাজে। সে বলে- আমার মাকে বিয়ে দিয়ো না, আমি আমার মাকে খাওয়াব। মারুফ তো চলে গেল, এই মেয়েকে কে দেখবে, খাবে কিভাবে? পিকনিকে যাবে বলে টাকা চেয়েছিল। আমরা টাকা দিতে পারিনি। তখন মারুফ মন খারাপ করেছিল। কোচিং সেন্টারের মাস্টাররা টাকা দিয়ে তাকে পিকনিকে নিয়ে যায়। সেই মাস্টাররাও মারা গেছে।
মারুফের স্বজনদের সান্ত্বনা দিতে আসা প্রতিবেশী বৃদ্ধা আতরজান বলেন, ছেলেটা (মারুফ) চোখের সামনে বড় হয়েছে। রাস্তায় দেখলে সালাম দিত। নাতি হিসেবে ঠাট্টা-মশকরা করত। দোকানের সামনে বসে থাকত। কারও সঙ্গে কখনও বেয়াদবি করতে দেখিনি। সজীব, মারুফ দুজনই ঘরের ছেলের মতোই ছিল। চোখের সামনে দুটো ছেলে চলে গেল- খুব কষ্ট হচ্ছে।