মায়ের ‘অপহরণ নাটক’ সাজান মরিয়ম মান্নান : পিবিআই

| বুধবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:১০ পূর্বাহ্ণ

জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে খুলনার আলোচিত রহিমা বেগম ‘অপহরণ নাটক’ সাজানো হয়েছিল বলে তদন্তে পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন।

প্রায় চার মাস তদন্ত শেষে পিবিআইয়ের জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, তদন্তে উঠে এসেছে এটি অপহরণ নয়, মূলত জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে ওই ‘অপহরণ নাটক’ সাজিয়েছিলেন রহিমা ও তার দুই মেয়ে মরিয়ম মান্নান ও আদুরি আকতার। এরই মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন অনুমোদনের জন্য পিবিআইয়ের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে শিগগিরই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবে। খবর বিডিনিউজের।

খুলনার মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে গত ২৭ অগাস্ট নিখোঁজ হন ৫৫ বছর বয়সী রহিমা বেগম। রাতে রহিমার ছেলে মিরাজ আল সাদী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে রহিমার মেয়ে আদুরি অপহরণের মামলা করেন। রহিমার সন্ধান চেয়ে মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন করাসহ তার মেয়েদের দৌড়ঝাঁপ অনেককে স্পর্শ করে। নিখোঁজের ২৯ দিন পর রহিমাকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরের দিন আদালতে হাজির করা হলে অপহরণের দাবি করে জবানবন্দি দেন রহিমা। এরপর আদুরির জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয় আদালত। পরে মরিয়ম বলেন, তার মা অপহৃত হয়েছেন বলে শুরুতে তিনি মনে করলেও তার ধারণা পাল্টেছে। তিনি এখন মনে করছেন, স্বেচ্ছায়ই চলে গিয়েছিলেন তার মা।

পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মুশফিকুর বলেন, জমি নিয়ে মরিয়ম মান্নানদের সঙ্গে প্রতিবেশীদের ঝামেলা চলছিল। মরিয়ম মান্নান বিভিন্ন সময় ওই প্রতিবেশীদের নামে জমি নিয়ে মামলা দিয়েছেন আর প্রতিবেশীরা প্রতিবারই সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জমা দিয়ে বেরিয়ে গেছেন। সন্দেহভাজন হিসেবে মামলার এজাহারে যাদের নাম দেওয়া হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে না চাওয়ায় সৎবাবাকেও গ্রেপ্তার করিয়েছিলেন মরিয়ম মান্নান। সর্বশেষ প্রতিবেশীদের ফাঁসাতেই ওই নাটক করা হয়েছে। ‘আত্মগোপনে’ যেতে ‘নিখোঁজের দিন’ মরিয়ম মান্নান মাকে মুঠোফোনের মাধ্যমে এক হাজার টাকাও পাঠিয়েছিলেন উল্লেখ করে পুলিশ সুপার আরও বলেন, ওই ঘটনার আগেও রহিমা বেগম বহুবার কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে আবার ফিরে আসেন। এসব ঘটনা পরিবারের সদস্যরা জানতেন। তবে ওই ঘটনা ছিল পরিকল্পিত।

এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে মরিয়াম মান্নান বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে কী পেয়েছেন, তারই ভালো বলতে পারবেন। তদন্ত কর্মকর্তা আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি।

মামলার বরাত দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. আবদুল মান্নান বলেন, ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে রহিমা বেগম নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ করেন তার পরিবারের সদস্যরা। ওই দিন দিবাগত রাত ২টার দিকে খুলনা নগরের দৌলতপুর থানায় মায়ের অপহরণের অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি করেন রহিমার ছেলে মিরাজ আল সাদী। রহিমা বেগমকে অপহরণ করা হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে পরদিন ওই থানায় মামলা করেন আরেক মেয়ে আদুরী আক্তার। ওই মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাদের প্রতিবেশী মঈন উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মাদ জুয়েল ও হেলাল শরীফের নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই সময়ে তাদের গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছেন। রহিমা বেগম তার মেয়ে আদুরী আক্তারের জিম্মায় খুলনা শহরের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির কার্যকরী পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ ৬ মাসের জন্য স্থগিত
পরবর্তী নিবন্ধম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি টের পেয়ে পালালেন বিয়ে বাড়ির অতিথিরা