আহলান সাহলান মাহে রমজানুল মোবারক। খোশ আমদেদ অভিনন্দন পবিত্র মাস রমজানকে। যে মাসের আগমন আমাদেরকে করেছে সৌভাগ্যবান। অবারিত করেছেন রহমত, বরকত ও নাজাতের দ্বার।
আমরা যে মাসটির জন্য অপেক্ষা করেছিলাম এগার মাস, যে মাসটির জন্য প্রার্থনা করেছিলাম এবং রজব ও শাবান মাস প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম, যেভাবে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। মহান আল্লাহর দরবারে হাজার শোকরিয়া তিনি এই মাসটি আমাদের নসিব করেছেন। রমজান মাসটি অত্যন্ত মর্যাদার। হিজরী বার মাসের একটি মাত্র মাসের নাম পবিত্র কোরআেেন উল্লেখ আছে, তা হলো ‘রমজান’। এই রমজান শব্দটির মধ্যে পাঁচটি অর্থ আছে। হাদিসে পাকে মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘কোরআনের একটি হরফ উচ্চারণ করলে দশটি পুণ্য অর্জিত হয়। রমজান শব্দটিতে পাঁচটি হরফ আছে। এ শব্দটি উচ্চারণ করার সাথে সাথে ৫০টি নেকী অর্জিত হয়ে যায়।
আমরা নববর্ষে মোবাইলে ম্যাসেজ লিখি বলি, ‘বিগত বছরের জরাজীর্ণতা মুছে নব বছরের নব চেতনায় নিষ্কলুষ সময়ের আগমন হোক, পুরোনো জড়তা মুছে যাক’। এসব শুধু কথার কথা, কারণ নববর্ষ পুরাণের বিদায় করে কিন্তু পুরানো পাপ মোচন করতে পারে না। পুরোনো পাপ মোচন করে মাহে রমজানের রোজা।
‘রমজুন’ মূলধাতু হতে ‘রমজান’ শব্দটি এসেছে। অর্থ দগ্ধ করা, জ্বালিয়ে ভস্মীভূত করা। রমজান কাকে জ্বালাবে, মানুষকে? এটি ইসলামের বিধান নয়। মানুষের কুপ্রবৃত্তিকেই জ্বালাবে। জ্বালানোর পর যেটা থাকবে সেটি খাঁটি। মানুষের অভ্যন্তরীণ পশুত্বকে জ্বালালে মনুষ্যত্ব জাগ্রত হয়। তখন মানুষ মানুষ হয়ে ওঠে।
পশুর গর্ভে পশু জন্মে, বৃক্ষ জন্মে বৃক্ষ, কিন্তু মানুষে জন্মেও মানুষ হয় না। মনুষ্যত্ব মানুষকে অর্জন করতে হয়। পশুকে পশু হওয়ার, বৃক্ষকে বৃক্ষ হওয়ার আহ্বান জানানো হয় না, শুধু মানুষকেই মানুষ হওয়ার জন্য আহবান জানানো হয়। যে ব্যক্তি মানুষ ও অমানুষের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না, সে কখনো প্রকৃত মানুষ হতে পারেনা। মানুষ ও অমানুষের পার্থক্য করতে লাগে পরিশুদ্ধ হৃদয়। পশুকে অপশু বলে কেউ সম্বোধন করে না, কিন্তু মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে যখন পশুর কাজ করে তখন তাকে বলে অমানুষ। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে আল্লাহপাক হিংসা, ক্ষোভ, রাগ ও লোভ প্রদান করেছেন। এসব নিয়ন্ত্রণ করার বিধানও শিখিয়ে দিয়েছেন। কুপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করতে কঠোর সাধনা দরকার। তাই ‘সিয়াম’ শব্দটির পূর্বে ‘সাধনা’ শব্দটি যুক্ত করেছেন।
অভ্যাসের দাস হলে মানুষ মানুষ হতে পারে না। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে আমরা প্রকৃত মু’মিন হতে পারি। পাপাচার ব্যভিচার হতে দূরে থাকতে মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। সকালের নাস্তা খাওয়া, পিপাসা পেলে পানি খাওয়া, ক্ষিদে পেলে খাবার খাওয়া আমাদের দৈনন্দিনের অভ্যাস। তা রমজানে আমাদের ত্যাগ করতে হয়। অর্থাৎ মানুষ অভ্যাসের দাস নয় তা প্রমাণ করে রোজার মাধ্যমে। মহান আল্লাহপাক আমাদের হৃদয়ের পরিবর্তনের তাওফিক দান করুন, আমিন।