মাহে রমজানের সওগাত

মুহম্মদ মাসুম চৌধুরী | সোমবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

ইসলামের দৃষ্টিতে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের উপর যাকাত প্রদান করা ফরজ। শরীয়তের অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত যে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিককে অবশ্যই যাকাত প্রদান করতে হবে। যাকাত অস্বীকার করা কুফুরি। নিসাব পরিমাণ সম্পদ মালিকের নিকট এক বছর সম্পদ থাকলে নির্দিষ্ট পরিমাণ যাকাত হকদার ব্যক্তির নিকট প্রদান করতে হবে। যাকাতের আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা ও বৃদ্ধি করা। যাকাত দ্বারা সম্পদ পবিত্র হয়, না দিলে অপবিত্র হয়।

আর যাকাত দ্বারা দারিদ্র্য বিমোচন হয়। গরীবের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ক্রয় ক্ষমতা বাড়লে পণ্যের গ্রাহক বৃদ্ধি হয়। ঘুরে ফিরে সে টাকা পণ্যের মালিক ধনীর পকেটেই আসে। ‘পবিত্রতা’ ও ‘বৃদ্ধি করা’ এই দুইটি শব্দের আভিধানিক অর্থের মধ্যে যাকাতের কারণ নিহিত রয়েছে। দ্বিতীয় হিজরী সনে যাকাত ফরজ হয়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো আর। রুকুকারীদের সাথে রুকু করো (২:৪৩)। পবিত্র কোরআনে আরো ইরশাদ আছে, ‘ধনীদের ধন সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্থ ও বঞ্চিতদের অধিকার’।

আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনের অন্য একটি আয়াতে করিমায় ঘোষণা করেছেন, যারা সোনা রূপা জমা করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না অর্থাৎ যাকাত প্রদান করে না, তাদেরকে কঠিন শাস্তির সংবাদ প্রদান করো’। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলামের ভিত্তি। (১) এ মর্মে সাক্ষ্য দেওয়া, আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল। (২) নামাজ প্রতিষ্ঠা করা। (৩) যাকাত প্রদান করা। (৪) রমজান মাসে রোজা রাখা এবং (৫) হজ আদায় করা। যাকাত প্রদানের মধ্যে অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন-যাকাতের কারণে মানুষের অন্তর হতে কৃপণতা দূর হয়। ঈমানী শক্তি বৃদ্ধি পায়। সম্পদের প্রতি মায়া কমে যায়। ত্যাগেই প্রকৃত সুখ তা আত্মস্থ হয়। কল্যাণকামী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। অন্তরের কালিমা দূর হয়। মানুষের সাথে মানুষের বন্ধন সুদৃঢ় হয়। যাকাত প্রদানকারীর গুনাহ মার্জনা হয়।

যাকাত গ্রহণকারীর অর্থনৈতিক মুক্তি আসে, ফলে অপরাধ কমে। ধন সম্পদে বরকত হয় ইত্যাদি। কত সম্পদের মালিক হলে যাকাত ফরজ হবে তা মুসলমানদের জানা প্রয়োজন। কোনো আজাদ, জ্ঞানবান, প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা (প্রায় ৬১৩ গ্রাম) অথবা সাড়ে সাত তোলা সোনা (প্রায় ৮৮ গ্রাম) কিংবা সমমূল্যের টাকা বা ব্যবসায়িক মালের মালিক হয় তবে এ মালকে শরীয়তের পরিভাষায় যাকাতের ‘নিসাব’ বলে। এই পরিমাণ সম্পদ এক বছর তার মালিকানাধীন থাকলে তার উপর যাকাত আদায় করা ফরজ হবে। যে ব্যক্তি উক্ত সম্পদের মালিক হয় তাকে ‘মালেকে নিসাব’ বা ‘সাহিবে নিসাব’ বলে। অবশ্যই এ সম্পদ ঋণমুক্ত এবং তার মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হতে হবে। এই সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ (শতকরা ২.৫০) যাকাত হিসেবে প্রদান করতে হবে। (হিদায়া, ১ম খণ্ড, ও ফতোয়ায়ে আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম বন্দরকে বিশ্বমানের করতে সরকার কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধশুরু হচ্ছে হংকং-চট্টগ্রাম নতুন রুটের যাত্রা