সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উন্নতি হচ্ছে বিজ্ঞান প্রযুক্তির। কিন্তু মানুষের নৈতিক উন্নতি হচ্ছে না। সবাই বলে চাল, ডাল, মাছ, মাংস, সবজি, পরিবেশ সবই ভেজাল। ভেজাল খেয়ে ওষুধ খাবেন? তাও মেয়াদোত্তীর্ণ বা ভেজাল। চিকিৎসক জানিয়েছেন ফরমালিনও ভেজাল। কারণ খাদ্যে ফরমালিন ব্যবহারে খরচ বেড়ে যায়। তাই কম খরচের জন্য লাশ না পচার যে কেমিক্যাল আছে তা খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফরমালিনও যখন ভেজাল হয়ে গেছে তখন আমরা ভেজালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ভেজাল কমাতে পারবো না। প্রকৃত পক্ষে আমাদেরকে ভেজাল মানুষের সংখ্যা কমাতে হবে। ভেজাল মানুষের সংখ্যা কমাতে না পারলে কোনো সমস্যাই সমাধান হবে না।
দুনিয়ার প্রধান প্রধান সমস্যার একটি তালিকা করুন। যেমন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, সীমাহীন লোভ, পণ্যে ভেজাল, পরিবেশ বিপর্যয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অপপ্রয়োগ ইত্যাদি। প্রথমত আমাদেরকে এসব সমস্যার মূলে যেতে হবে। না হয় কোনো সমস্যারই সমাধান করা যাবে না। মূল সমস্যা সমাধান করতে হলে মানুষকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার মাধ্যমে ভাল মানুষের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বিজ্ঞান প্রযুক্তি যতই এগিয়ে যাক, নীতি নৈতিকতার শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হলে ধর্ম সাহিত্য সংস্কৃতি মানবিকতা সবই পিছিয়ে যাবে। বিজ্ঞান প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ নৈতিক শিক্ষা ছাড়া সম্ভব নয়। দুনিয়াতে আজ নৈতিক শিক্ষার অভাবে দশ ভাগ চিকিৎসা সেবা আর ৯০ ভাগ মারণাস্ত্রের জন্য অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। নীতি নৈতিকতার অভাবে বিজ্ঞান প্রযুক্তি আশীর্বাদের চেয়ে অভিশাপটাই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এখন আমরা বুদ্ধির জোরে বাঁচতে চাই, বিবেকের তাড়নায় নয়। নৈতিকতার অভাবে বাজার কেন্দ্রিক সভ্যতার পতন হলে তা আগের মত শুধুমাত্র কোনো একটি অঞ্চলের পতন হবে না, এই পতন হবে বিশ্বব্যাপী। এই মহাবিপর্যয় থেকে বাঁচতে হলে একটি মাত্র পথ খোলা আছে, তা হলো আত্মশুদ্ধি, চিত্তশুদ্ধি মানুষ তৈরি করা। মাহে রমজানের রোজা আত্মশুদ্ধ, পরিশুদ্ধ মানুষ তৈরির শিক্ষা দেয়। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ক্বাদ আফলাহা মান জাক্কাহ। অর্থাৎ সে ব্যক্তি সফলকাম হয়েছে যে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আরো ঘোষণা করা হয়েছে, ওয়াক্কাদ খাবা মান দাসসাহা।
অর্থাৎ আর যে আত্মাকে কলুষিত করেছে সে ব্যর্থ হয়েছে। রমজানের রোজা দ্বারা আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা যায় বলে রমজানকে আত্মশুদ্ধির মাস বলা হয়। নিজেকে প্রশ্ন করুন, জীবনকে চালায় কে? জীবনের রাজা হলো মানুষের মন। মানুষ সুখী হতে চায় কিন্তু সবাই তো সুখী হতে পারে না। মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই মানুষ সুখী হতে পারে। মনকে বশে আনতে ধ্যান মেডিটেশন এবং সাধনা প্রয়োজন। এই সাধনা সিয়াম দ্বারা সম্ভব বলেই ‘সিয়াম’ শব্দটির সাথে সাধনা শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে। মানুষ শারীরিক ব্যায়াম করে কিন্তু মানসিক ব্যায়াম করে না। অথচ শারীরিক কষ্ট ও আঘাতের চেয়ে মানসিক আঘাত অনেক বড়। স্বাস্থ্য বিজ্ঞান আমাদের জানিয়েছে, ৭০ ভাগ রোগ মানসিক আর ৩০ ভাগ আঘাতজনিত ও জীবাণুবাহী। আমরা শারীরিক সুস্থ থাকার জন্য কত ধরনের চিকিৎসা ও ব্যায়াম করি কিন্তু মানসিক সুখের জন্য মনের খোরাকের ব্যবস্থা করি না। ইসলাম ধর্মের বিধান রোজা-নামাজ-হজ্ব শারীরিক ও মানসিক ব্যায়াম একই সাথে সংযুক্ত। মহান আল্লাহ পাক আমাদের মানসিকভাবে সুখী হওয়ার তৌফিক দান করুক। আমিন।