প্রকারান্তরে মাহমুদউল্লাহকে টেস্ট ক্রিকেট থেকে ছাটাই করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন নির্বাচকরা। তারপরও জিম্বাবুয়ে সফরের একেবারে আগ মুহূর্তে দলে নেওয়া হয় মাহমুদউল্লাহকে বাড়তি ক্রিকেটার হিসেবে। তামিম ইনজুরিতে পড়ায় সুযোগ মেলে মাহমুদউল্লাহর। আর সে সুযোগটাকে যে এই অল রাউন্ডার এভাবে কাজে লাগাবেন সেটা হয়তো ভাবেননি তিনি নিজেও। মাহমুদউল্লাহ এবং তাসকিনের বীরত্বে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ দল গড়েছে রানের পাহাড়। নবম উইকেটে রেকর্ড পার্টনারশিপ, মাহমুদউল্লাহর ক্যারিয়ারের পঞ্চম শতকটাকে দেড় শতকে পরিণত করা, তাসকিনের ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি সব মিলিয়ে ম্যাচের প্রথম দুদিন রাজত্ব করেছে বাংলাদেশ। টানা প্রায় পাঁচ সেশন ব্যাট করেছে বাংলাদেশ। আর তাতেই প্রথম ইনিংসে টাইগারদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪৬৮। ১৫০ এ অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ। তাসকিন ফিরেছেন ৭৫ রান করে। ম্যাচের প্রথম দিনের প্রথম সেশনের কথা চিন্তা করলে এই স্কোর ছিল কল্পনারও বাইরে। দলের আটজন ব্যাটসম্যান যেখানে ব্যাট করেছেন ৭৮ ওভার; সেখানে মাহমুদউল্লাহ এবং তাসকিন করেছেন ৪৫ ওভার। আর এই ৪৫ ওভারে রান তুলেছেন ১৯১। মাত্র ৪ রানের জন্য বিশ্ব রেকর্ড গড়া হয়নি এ দুজনের। আগের দিন ১৩২ রানে ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশ রানের পাহাড়ে চড়ে রিয়াদ-তাসকিনের বীরত্বের আগে লিটন-মোমিনুলের হাফ সেঞ্চুরিতে। তবে এই দুরন্ত লড়াইয়ের মূল নায়ক মাহমুদউল্লাহ। প্রায় দেড় বছর পর টেস্ট খেলতে নেমে তিনি নিজেকেও নিয়ে গেলেন অনন্য উচ্চতায়। আট নম্বরে ব্যাট করতে নেমে খেলেছেন বাংলাদেশের হয়ে রেকর্ড গড়া ইনিংস। টেস্ট ইতিহাসে এই পজিশনে যা পঞ্চম সর্বোচ্চ।
আগের দিনের ৮ উইকেটে ২৯৪ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ এবং তাসকিন। দিনের প্রথম সেশনেই ভাঙতে পারতো এই জুটি। নিজের ৩২ রানে স্লিপে সহজ ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান তাসকিন। এরপর অবশ্য আর পেছনে ফিরে তাকাননি দুজন। দিনের প্রথম সেশনেই এ দুজন তুলে নেন ১১০ রান । আর এরই মধ্যে লাঞ্চের আগে মাহমুদউল্লাহ স্পর্শ করেন তার ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি। এর পরপরই তাসকিন তুলে নেন তার প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। লাঞ্চের পর পর ৬৬ রানের মাথায় আরো একবার জীবন পান তাসকিন। সহজ রান আউটের হাত থেকে এবার রক্ষা পান। শেষ পর্যন্ত তাসকিন থেমেছেন ১৩৪ বলে ১১টি চারের সাহায্যে ৭৫ রান করে। এই জুটি ভাঙার পর শেষ জুটি আর টেকেনি বেশিক্ষণ। মুজারাবানির চতুর্থ শিকার হয়ে শেষ ব্যাটসম্যান ইবাদত হোসেন শূন্য রানে ফিরলে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। তবে ভাগ্য ভালো তার আগেই নিজের দেড়শ রান পূরণ করে নেন মাহমুদউল্লাহ। নিজের ৫০তম টেস্টে এসে দেড়শ রানের ইনিংস খেললেন মাহমুদউল্লাহ। তার ২৭৮ বলের ইনিংসটিতে ১৭টি চারের পাশাপাশি একটি বিশাল ছক্কার মার ছিল। এর আগে মাহমুদউল্লার সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ১৪৬ রান। হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৯ সালে করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। এর আগে ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকায় ১০১ রানের অপরাজিত আরেকটি ইনিংস খেলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। জিম্বাবুয়ের পক্ষে সফল বোলার মুজারাবানি ৯৪ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট।
জবাব দিতে নামা স্বাগতিক জিম্বাবুয়েও খারাপ করেনি দিনের শেষ সেশনটাতে। এক উইকেট হারিয়ে ১১৪ রান সংগ্রহ করেছে। দুই ওপেনার শুম্বা এবং কাইতানো বেশ ভালই এগুচ্ছিলেন। ৬১ রানে এজুটি ভাঙেন সাকিব। ৪১ রান করা শুম্বাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ফেরান সাকিব। এই ওপেনারের ৮৩ বলের ইনিংসটাতে ৭টি চারের মার ছিল। এরপর অধিনায়ক টেইলরকে নিয়ে দিনের বাকি সময়টা পার করে দেন কাইতানো। কাইতানো ৩৩ এবং টেইলর ৩৭ রানে অপরাজিত আছেন। জিম্বাবুয়ের ফলো অন এড়াতে এখনো ১৫৪ রান করতে হবে। ম্যাচের তৃতীয় দিনে সে কাজটা করতে পারে কিনা জিম্বাবুয়ে সেটাই এখন দেখার বিষয়।