পরাধীনতার আগল থেকে দেশকে মুক্ত ও স্বাধীন করার সংগ্রামে আত্মোৎসর্গকারী, দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মাস্টার দা সূর্যসেন। জন্ম ১৮৯৩ সালের ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের নোয়াপাড়া গ্রামে। আজ এই মহান বিপ্লবীর ১২৬তম জন্মবার্ষিকী।
উচ্চ মাধ্যমিকে সূর্যসেন ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র। বি.এ পাশ করেন কলকাতার বহরমপুর কলেজ থেকে। এখানেই বিপ্লবী দলের সাথে তাঁর যোগাযোগ ঘটে। স্নাতক পাশ করে তিনি নিজ গ্রামে ফিরে উমাতারা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। সূর্যসেন হয়ে ওঠেন মাস্টার দা। সেই সাথে চলতে থাকে সংগঠন তৈরির কাজ। সংগঠন তৈরির কাজে তাঁর সাথী ছিলেন অম্বিকা চক্রবর্তী, গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ, নির্মল সেন প্রমুখ। গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন সূর্যসেন। নিজের বিপ্লবী দলের জন্য অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশে তিনি বাংলাদেশ ও কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরেছেন। ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার দখলের মতো ঐতিহাসিক ঘটনা এবং এর কিছুদিনের মধ্যে চট্টগ্রামের জালালাবাদ পাহাড়ে ব্রিটিশদের সাথে সূর্য়সেনের বিপ্লবী দলের সম্মুখযুদ্ধে সাময়িক হলেও ব্রিটিশদেরই পরাজয় হয়। সূর্যসেনের বিপ্লবী দলের অন্যতম কর্মী ছিলেন বীরকন্যা নামে খ্যাত বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, যিনি মাস্টার দার দলের সাথে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবে সশস্ত্র আক্রমণ করেছিলেন এবং ধরা পড়ার আগ মুহূর্তে পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। সূর্যসেন ব্রিটিশদের কাছে ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। ব্রিটিশরা তাঁকে গ্রেফতারের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। ১৯৩৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সূর্যসেন ইংরেজ সেনাদের হাতে গ্রেফতার হয়ে ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত হন। ১৯৩৪ সালের ১২ই জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলে মহান এই বিপ্লবীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। দেশের জন্য মাস্টার দা সূর্যসেনের এই আত্মত্যাগ যুগ যুগ ধরে বিপ্লবীদের প্রেরণার উৎস হয়ে রয়েছে।