দৃশ্যপট -১ : শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন গোল চত্বর। গতকাল বুধবার সকাল পৌনে ১০টা। বাঁশখালী থেকে ছেড়ে আসা একটি বাস থামে। যাত্রীরা নামতে যাবেন ঠিক তখনি বাসের দরজার সামনে উপস্থিত হন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। এসময় মাস্ক পরিহিত কয়েকজনের পর একজন যাত্রী নামেন যার মুখে মাস্ক ছিল না। তখন প্রশাসক ওই যাত্রীকে উল্টো দিকে অর্থাৎ শাহ আমানত ব্রিজের দিকে পাঠিয়ে দেন। সাথে এটাও ঘোষণা দেন, মাস্ক না পরে কাউকে শহরে ঢুকতে দেয়া হবে না।
দৃশ্যপট -২ : সিমেন্ট ক্রসিং মোড়। সকাল পৌনে ১১টা। পতেঙ্গার দিক থেকে আসছিল একটি লরি। খোরশেদ আলম সুজন চালককে হাত নেড়ে ইশারা দিলেন লরি থামানোর জন্য। লরি থামতেই দেখা গেল চালকের মুখে মাস্ক নাই। তখন প্রশাসক নির্দেশ দিলেন লরিটি ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য। সাথে ভবিষ্যতে মাস্ক পড়ার জন্য সতর্কও করেন।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, করোনা মোকাবেলায় মাস্ক পরিধান নিশ্চিতে হার্ডলাইনে ‘নো মাস্ক, নো এন্ট্রি’ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল ছিল কর্মসূচির প্রথম দিন। কর্মসূচির আওতায় শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন গোল চত্বর ও সিমেন্ট ক্রসিং মোড়ে অবস্থান নেন প্রশাসক সুজন। অবশ্য শহরের আরো তিনটি প্রবেশপথেও এভাবে মাস্ক পরা নিশ্চিতে সকাল থেকে মাঠে ছিলেন খোরশেদ আলম সুজন। অন্য প্রবেশগুলোর মধ্যে সকাল ৮টায় সিটি গেইট, ৯টায় অক্সিজেন মোড় এবং দুপুর আড়াইটায় ছিলেন কাপ্তাই রাস্তার মাথায়। প্রতিটি স্পটে অবস্থান করে তিনি বিভিন্ন যানবাহন থেকে নামা যাত্রী, চালক-হেলপার এবং পথচারীদের মুখে মাস্ক ছিল কী না প্রত্যক্ষ করেন। এসময় যাদের মুখে মাস্ক ছিল না তাদের ফেরত পাঠান। একইসঙ্গে যাদের মুখে মাস্ক ছিল তাদের তালি দিয়ে অভিনন্দন জানান। প্রশাসকের ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচিকে সাধুবাদ জানান সাধারণ লোকজন।
প্রতিটি মোড়ে চসিক, চট্টগ্রাম সিটি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) কর্ণফুলী রেজিমেন্টের সমন্বয়ে চেক পোস্টও বসানো হয়। এছাড়া আরেকটি টিম নগরীর বিভিন্ন শপিংমল ও কাঁচা বাজারগুলোতে পরিদর্শনে ছিল। টিমের সদস্যরা মাস্ক পরা নিশ্চিতে সচেতনতা সৃষ্টিতে মাইকিং, লিফলেট এবং মাস্ক বিতরণ করেন।
কর্মসূচি প্রসঙ্গে খোরশেদ আলম সুজন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য মাস্ক পরতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। করোনায় প্রকোপ বেড়েছে। এক্ষেত্রে পত্র-পত্রিকায় যে সংবাদ আসছে বাস্তবে এ চিত্র কিন্তু আরো ভয়াবহ। কাজেই মাস্ক পরা ছাড়া উপায় নাই। যে কোনো উপায়ে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় লরি ঘুরিয়ে দিলাম। সে গিয়ে অন্য চালকদের বলবে, মাস্ক না পরলে যেতে দিচ্ছে না। এর মধ্য দিয়ে বাকি চালকরাও মাস্ক পরতে আগ্রহী হবেন।
এদিকে সকালে শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন গোল চত্বর এলাকায় কর্মসূচির উদ্বোধনকালে প্রশাসক বলেন, করোনা মোকাবেলায় আমাদের এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো মানুষকে সচেতন করা। একমাত্র সচেতনতায় পারে এই সংক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করতে। কোভিড-১৯’র দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে চট্টগ্রাম শহরেও সংক্রমণ মারত্মকভাবে বেড়েছে। পত্রিকা-গণমাধ্যম মারফত আমরা সংক্রমণ ও মৃত্যুর যে পরিসংখ্যান দেখছি তা দিয়ে সঠিকতা নির্ণয় করলে হবে না। অনেকে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে সামাজিকভাবে তা চেপে রাখেন। কারণ করোনায় মারা গেলে আত্মীয়-পরিজন সমাজের লোকেরা জানাযা ও দাফন কাফনে অংশ নিতে চান না। এটা আরেক সামাজিক বিড়ম্বনা।
প্রশাসক বলেন, চিকিৎসকদের মতে, নির্দিষ্ট সময় পরে লাশে করোনার জীবাণু থাকেন। ফলে এর মাধ্যমে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ তেমন নাই বললেই চলে। বরং জানাযা বা জমায়েতে উপসর্গ আছে এরকম যেকোনো উপস্থিত ব্যক্তি থেকে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই ভ্যাকসিন বা টিকা না আসা পর্যন্ত আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরিধান করতে হবে। বার বার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার কোনো বিকল্প নেই। জনসাধারণকে মনে রাখতে হবে এখন পর্যন্ত মাস্কই টিকা। কোনো ভাবেই মাস্ক পকেটে, থুতনিতে রাখা যাবে না। যথা নিয়েমে নাক মুখ ঢেকে তা পরিধান করতে হবে।
প্রশাসক বলেন, আমি চাই আমার প্রিয় প্রাণের চট্টগ্রাম নগরীর ৬০লাখ অধিবাসী স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকুক। আমার এই কঠোরতা নগরবাসীর ভুল বোঝার কোনো অবকাশ নেই। দেশের স্বার্থে নগরবাসী আমাকে ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরশেনকে সহযোগিতা করবে এটাই আমার প্রত্যাশা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক, ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. আলী, প্রশাসকের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাসেম, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) কর্ণফুলী রেজিমেন্টের কমান্ডার মেজর এ কে এম শামসুদ্দিন, সার্জেন্ট বশীর হেলাল, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চট্টগ্রাম সিটি ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জব্বার, চসিকের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদ আলম চৌধুরী, রেড ক্রিসেন্টের সব্যসাচী দেবনাথ, রাহাত ইসলাম, তমা দেব নাথ।