মারফায় আগ্রহ জুমচাষিদের

| সোমবার , ৫ অক্টোবর, ২০২০ at ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ

ধানের পাশাপাশি সাথি ফসল হিসেবে মারফা চাষের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে বান্দরবানের জুমচাষিদের মধ্যে। বান্দরবানের চাষিরা এখন বিভিন্ন পাহাড় থেকে জুমের ফসল তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জুমে ধানের পাশাপাশি সাথি ফসল হিসেবে মরিচ, চিনাল, মারফা তিল, আদা, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে থাকেন। জুমচাষিরা ধান লাগানো থেকে শুরু করে কাটা পর্যন্ত- এ সময়টা সাথি ফসল হিসেবে স্বল্পমেয়াদী এসব ফসল রোপণ করেন। উৎপাদিত ফসল দিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রিও করেন তারা। ভালো ফলন, চাহিদা বেশি এবং লাভ বেশি হওয়ায় বর্তমানে অনেকেই শসা জাতীয় ফসল মারফা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। খবর বাংলানিউজের।
পাহাড়ের জুমের মারফা সবজি বা সালাদ হিসেবে খাওয়া হয়। জুমের ধানের চারার ফাঁকে ফাঁকে বপন করা হয় মারফার বীজ। পাহাড়িরা সাধারণত এ সবজিটিকে মারফা বললেও সমপ্রদায় ভেদে এর আলাদা নামও রয়ে। যেমন চাকমা সমপ্রদায় একে মামবারা বলেন, আর ত্রিপুরা সমপ্রদায় একে বলে দরমাই, আবার মারমারা ঞোপ্রুসি বলে ডাকে মারফাকে।
পরিপক্ক মারফা তিন-চার মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ রাখা যায়। যেহেতু আলাদাভাবে মারফার চাষ হয় না, তাই আলাদা হিসেব নেই এ মারফার খরচের। তবে আনুমানিকভাবে একটি জুম ক্ষেতে মারফার বীজ বুনতে চা-পাঁচ হাজার টাকার মত খরচ হয় বলে জানান বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক। তিনি জানান, মারফা সাধারণত জুমের মিশ্র ফসল, আলাদাভাবে জুমে মারফা লাগানো হয় না, জুমের ১২-১৫টি ফসলের মধ্যে মারফা অন্যতম। মারফার পুষ্টিগুণ খুব বেশি। ৯০-৯৫ ভাগ পানি, ভিটামিন বি১ ও বি২ ফলিক এসিড, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন রয়েছে মারফায়। শরীরের ওজন কমাতে, হজম শক্তি বৃদ্ধি, শরীরকে ঠান্ডা রাখতে, হিট স্ট্রোক থেকে রক্ষা পেতে মারফা কার্যকর।
বান্দরবানের জুমচাষিরা এবার মারফার ফলন নিয়ে খুশি। জুমচাষি সিম প্রো ম্রো জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর মারফার উৎপাদন ভালো হয়েছে। দামও পাওয়া যাচ্ছে ভালো। গত বছর প্রতি কেজি মারফার দাম ছিল ২৫-৩০ টাকা। এ বছর সেটা ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বান্দরবানের বালাঘাটা বাজারে মারফা বিক্রি করতে আসা রাজসেন তংচঙ্গ্যা বলেন, মারফা কচি অবস্থায় সবুজ, আধা পাকা অবস্থায় সাদা ও পাকলে হলদে রং ধারণ করে। এক একটি লতায় ১০ থেকে ১৫টি পর্যন্ত মারফা ফলে। একেকটি মারফার আকার ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি আর ওজন আধাকেজি থেকে এক কেজির বেশি হতে পারে। পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত সব জনগোষ্ঠীর কাছে মারফা একটি জনপ্রিয় সবজি।
বান্দরবানের কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এ কে এম নাজমুল হক বলেন, বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, লামা, আলীকদমসহ সাতটি উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০৬ হেক্টর জমিতে মারফার চাষ করা হয়েছে। বর্তমানে এক হাজার ৩৪৮ জন কৃষক মারফা চাষ করেছেন। দিন দিন পার্বত্য জেলা বান্দরবানে মারফার ফলন বাড়ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্যাটরিনার লুকোচুরি প্রেম
পরবর্তী নিবন্ধ‘স্ব-মেরামতে সক্ষম’ ডিসপ্লের পেটেন্ট অ্যাপলের