স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দিনে ঢাকায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় সংঘাত-নাশকতার ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক যুবলীগ নেতা।
সোমবার (৫ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় মামলাটি দায়ের করা হয় বলে জানান মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার সৈয়দ নূরুল ইসলাম। বিডিনিউজ
তিনি বলেন, “খন্দকার আরিফুজ্জামান নামে এক ব্যবসায়ী বাদী হয়ে এই মামলা করেছেন। মামলায় মারধর, ভাঙচুর, গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।”
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ২ থেকে ৩ হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।”
মামলার বাদী আরিফুজ্জামান নিজেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক পরিচয় দিয়ে বলেন, “হেফাজতের নাশকতার বিরুদ্ধে সাধারণ মুসল্লিদের পক্ষে আমি এই মামলা করেছি।”
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত ২৬ মার্চ ঢাকায় পৌঁছান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার এই সফরের বিরোধিতা করে আসছিল হেফজতে ইসলামসহ কয়েকটি সংগঠন ও রাজনৈতিক দল।
সেদিন জুমার নামাজের পর মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসা একদল লোক ভারত ও মোদীবিরোধী নানা স্লোগান দিতে শুরু করলে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে তাদের মারামারি বেঁধে যায়।
সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও জল কামান ব্যবহার করে। এ সময় মসজিদের উত্তর গেইটের সামনে রাস্তার পাশে দু’টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় মোদীবিরোধীরা। পুলিশের দিকে বৃষ্টির মতো ঢিল ছোড়ে তারা।
সংঘর্ষের মধ্যে সাংবাদিক, পুলিশ, সাধারণ নাগরিক সহ অন্তত ৬০ জন আহত হন বলে পুলিশের ভাষ্য।
ঐ ঘটনায় ৫০০ থেকে ৬০০ জন ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ আসামির বিরুদ্ধে পুলিশও একটি মামলা করে সেদিন রাতে।
আরিফুজ্জামানের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, “মামুনুল হকের প্রত্যক্ষ নির্দেশে দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র, দা, ছোরা, কুড়াল, কিরিচ, হাতুড়ি, তলোয়ার, বাঁশ, শাবল, রিভলবার নিয়ে এই হামলা চালানো হয়।”
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, “মামুনুল হকের প্রত্যক্ষ হুকুমে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব বাদীকে রড দিয়ে আঘাত করে। এতে তার ডান পা ভেঙে যায়। পরে অপর দুই যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা লোকমান হাকিম এবং নাসির উদ্দিন মনির লাঠি দিয়ে বাদীকে মারধর করে। এছাড়া নায়েবে আমির মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া কিরিচ দিয়ে টুটুল নামে একজনকে হত্যার উদ্দেশ্যে কোপায়।”
ঢাকার মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া হেফাজতের নায়েবে আমির মাজেদুর রহমানের বিরুদ্ধেও মারধরের অভিযোগ করা হয়েছে মামলার এজাহারে।
মামলার অপর অসামিরা হলো ঢাকার হেফাজত নেতা মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ, সহকারী মহাসচিব মাওলানা জসিম উদ্দিন, টঙ্গীর মাওলানা মাসুদুল করিম, অর্থ সম্পাদক মুফতি মনির হোসাইন কাসেমি, প্রচার সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজী, মোহাম্মদপুরের মাওলানা ফয়সাল আহমেদ, সহকারী দাওয়াত সম্পাদক মাওলানা মুশতাকুন্নবী,ছাত্র ও যুব সম্পাদক মাওলানা হাফেজ মো. জোবায়ের, দপ্তর সম্পাদক মাওলানা হাফেজ মো. তৈয়ব।
এজাহারে বলা হয়, “মামুনুল হক বায়তুল মোকাররম মসজিদের ভেতরে বসে বৈঠক করে সারাদেশে হামলার পরিকল্পনা করেন যার ফলশ্রুতিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের সাথে জামায়াতে ইসলামী, বিএনপির কর্মীরা ব্যাপক নাশকতা চালায়। তারা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালও ভেঙে ফেলে।”
আসামিদের বিরুদ্ধে হাতবোমা নিক্ষেপ, গুলি করা, মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া, দোকানের মালামাল লুট করার অভিযোগও আনা হয়েছে মামলায়।