মামলায় আসামি খালা, পায়ে ও কাপড়ে কাদামাটি দেখে সন্দেহ

গুপ্তধনের লোভে ভাগ্নেকে হত্যা

চকরিয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১১ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:২১ পূর্বাহ্ণ

গুপ্তধনের লোভে পড়েই আপন বড় বোন শাকিলা বেগমের দুই মাস ১৬ দিন বয়সী দুগ্ধপোষ্য সন্তান মো. আনাসকে পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে মাতামুহুরী নদীতে ছুঁড়ে ফেলে ছোট বোন গ্রাম্য বৈদ্য আঁখি রহমান (১৫)। এমনকি এত অল্প বয়সে বৈদ্যালির কাজ করা থেকে বিরত থাকতেও পরামর্শ দেন বড় বোন শাকিলা। এতে ক্ষুব্ধ হয়েই বোনের সন্তানকে বলী দিয়ে গুপ্তধন পাওয়ার লোভে এই সর্বনাশা কাণ্ড ঘটায় খালা আঁখি রহমান-এমন অভিযোগে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা শিশু মো. আনাস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। নির্মম-নিষ্ঠুরতায় হত্যাকাণ্ডের শিকার আনাসের বাবা হোছাইন আলী

বাদী হয়ে আপন শ্যালিকা আঁখি রহমানকে একমাত্র আসামি করে মামলাটি করেন। পরে
গ্রেপ্তার দেখিয়ে আঁখিকে উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে প্রেরণ করা হয়। এ সময় আদালতের বিচারক আঁখি রহমানকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
এর আগে ঘটনার খবর পাওয়ার পর পরই স্থানীয় জনতার সহায়তায় পুলিশ শিশু আনাসের খালা গ্রাম্য বৈদ্য আঁখি রহমান, ফুফু খাদিজা বেগম, বাবা হোছাইন আলী ও মা শাকিলা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়। দিনভর পুলিশের প্রাথমিক
জিজ্ঞাসাবাদে হত্যারহস্য বের হয়ে আসে। তবে শিশু সন্তান হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মা, বাবা ও ফুফুর সংশ্লিষ্টতা না থাকায় তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অবশ্য বাবা বাদী হওয়া ছাড়াও মা এবং ফুফু এই মামলায় সাক্ষী হয়েছেন।
মামলার এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী- গত মঙ্গলবার রাতে আপন খালা আঁখি রহমান, ফুফু খাদিজা বেগম এবং মা শাকিলা তাঁর দুগ্ধপোষ্য সন্তান আনাসকে বুকে নিয়ে একই বাড়িতে একই বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন বুধবার ভোররাতে বিছানায় থাকা মায়ের বুক থেকে শিশু আনাসকে তুলে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর বাড়ির পাশের মাতামুহুরী নদীতে মরদেহ ছুঁড়ে ফেলা হয়। এ সময় গ্রাম্যবৈদ্য আঁখি রহমানের পায়ে এবং পরণের কাপড়ের নিচে কাদামাটির প্রলেপ লেগে থাকে। ভোর পাঁচটার দিকে ঘুম ভাঙলে মা দেখেন বিছানায় তাঁর সন্তান আনাস নেই। এর পর খোঁজাখুঁজি শুরু হলে পরিবারের সদস্যরা খালা আঁখির পায়ে এবং কাপড়ে কাদামাটির প্রলেপ দেখতে পেয়ে আঁখিকেই সন্দেহ করে।
খুনি গ্রাম্য বৈদ্য আঁখি রহমানের পৈত্রিক বাড়ি চকরিয়ার বিএমচর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের ছৈনাম্মারঘোনা গ্রামে। সে ওই গ্রামের ছৈয়দ আকবরের ছোট কন্যা। খুনের শিকার শিশু আনাসের বাড়ি সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম সুরাজপুর গ্রামে।
খুনি আঁখি রহমানের বিএমচরস্থ বাড়ির আশপাশের একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে দাবি করেছেন, আঁখি রহমান প্রতিনিয়ত বাড়িতে বৈদ্যালি ও ঝাঁড়-ফুঁকের আসর বসাতো। তখন আঁখি অন্যজগতে আদিষ্ট হয়ে গুপ্তধন পেতে যাচ্ছে এবং সেই গুপ্তধন পেতে হলে একটি শিশুপুত্র সন্তানকে বলী দিতে হবে বলেও প্রচার করতো। সেই গুপ্তধনের আশায় আঁখি তার বড় বোন শাকিলার বাড়িতে বেড়ানোর ভান করে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে হত্যার পর লাশ মাতামুহুরী নদীতে ফেলে দেয়।
চকরিয়া থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘গুপ্তধনের লোভে পড়ে বড় বোনের শিশুসন্তান আনাসকে হত্যা করার বিষয়টি এখনো পুলিশের কাছে স্বীকার করেনি গ্রাম্য বৈদ্য আপন খালা আঁখি। তবে শিশুর মা শাকিলা তাঁর ছোট বোন আঁখিকে বারণ করতো এই বলে যে, এত অল্প বয়সে বৈদ্যালির কাজ ছেড়ে দিতে। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে শিশু আনাসকে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ মাতামুহুরী নদীতে ফেলে দেয় খালা আঁখি এমনটা ধারণা করা হচ্ছে।’
ওসি বলেন, ‘ঘটনার উদঘাটনে মামলার একমাত্র আসামি আঁখিকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমাণ্ডের আবেদন জানাবেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিষেধাজ্ঞার এক বছরের মাথায় র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ যুবকের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধইউক্রেন থেকে এলো সাড়ে ৫২ হাজার টন গম