কর্ণফুলী নদীতে চোরাকারবারীদের ফেলে যাওয়া দুই বস্তা গম পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় নৌ–পুলিশের করা মামলায় কর্ণফুলী থানা এলাকার আপন দুইভাই মো. জসিম ও মো. জাহাঙ্গীরকে সাক্ষী রাখা হয়েছে, তারা ঘটনার ব্যাপারে কিছুই জানে না বলে জানা গেছে। তবে নৌ থানা পুলিশের আব্দুল জলিল নামে একজন কনস্টেবলকেও মামলায় সাক্ষী করা হয়। এছাড়া পুলিশ আসামি হিসেবে যাদের শনাক্ত করার দাবি করেছে, সেই বিষয়েও ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর কর্ণফুলী নদীর শাহমীরপুর এলাকায় একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় দুই বস্তা গম (প্রতি বস্তা একমন) উদ্ধার করে সদরঘাট নৌ পুলিশ। ওই ঘটনায় চোরাই মালামাল বেচা–কেনার অপরাধে দশজনকে আসামি করে কর্ণফুলী থানায় একটি মামলা করেন নৌ পুলিশের এসআই মাসুদুল হক। এবিষয়ে সদরঘাট নৌ থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান গতকাল আজাদীকে বলেন, দুই বস্তা গম উদ্ধারের মামলাটি এখন তদন্তাধীন রয়েছে। সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করছেন। প্রকৃত ঘটনা কি ছিল বা ঘটনার সাথে কারা জড়িত তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। এব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করব না। অভিযান পরিচালনাকারী নৌ পুলিশের এসআই মাসুদুল হক এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ঘটনাস্থলে মালামাল জব্দের পর উপস্থিত সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে আসামিদের নাম ও ঠিকানা পাওয়া যায়। এসময় জব্দ তালিকায় সাক্ষীদের স্বাক্ষর নেয়ার কথা উল্লেখ করা হয় মামলার এজাহারে।
তবে সাক্ষীদের মধ্যে দুইভাই এ চোরাই গমের বস্তা উদ্ধার কিংবা ওই ঘটনায় তাদের সাক্ষী রাখার বিষয়ে কিছুই জানে না বলে তারা গতকাল আজাদীকে জানান। মামলার এজাহারে থাকা এক নম্বর সাক্ষী জসিম বলেন, ওইদিন গভীর রাতে কর্ণফুলীতে নোঙর করে রাখা তাদের একটি মাছ ধরার নৌকা নৌ পুলিশের সদস্যরা নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে সেখানে যায় জসিম ও জাহাঙ্গীর। এসময় নৌকা নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে নৌ পুলিশের সদস্যরা কোনো কিছু না বলে তাদেরসহ নৌকাটি নিয়ে থানার উদ্দেশে রওনা হয়। তখন ভোর রাত আনুমানিক সাড়ে ৪টা। এসময় কর্ণফুলীর ১২ নম্বর ঘাটে পৌঁছলে সেখানে একটি ডুবানো নৌকা তারা দেখতে পায়। এ সময় অন্ধকার ছিল। কোনো লোকজনও ছিল না। ওই ঘটনার ব্যাপারে আমরা এতটুকুই জানি। সেখান থেকে আমাদের দুই ভাইকে থানায় নিয়ে দিনভর বসিয়ে রাখা হয়। এক পর্যায়ে আমাদের নৌকাটি নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি কাগজে দু’জনকে স্বাক্ষর করতে বলে পুলিশ। এর কারণ জানতে চাইলে পুলিশের লোকজন তাদের নৌকা নিতে হলে এই কাগজে স্বাক্ষর করতে হবে। পরে তাদের চাপে স্বাক্ষর করে নৌকা নিয়ে তারা বাড়ি চলে আসে। জসিম বলেন, আমরা থানায় গিয়েছিলাম নৌকাটি নেয়ার জন্য। কিন্তু মামলায় আমাদের সাক্ষী হিসেবে থাকার জন্য কোনো কিছুই বলা হয়নি। আমরা পরে জানতে পারি আমাকে ও আমার বড়ভাইকে একটি মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে। অথচ ঘটনাটির ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। যাদের আসামি করা হয়েছে তাদেরকেও আমরা চিনি না। পুলিশ আমাদের দুই ভাইকে শুধু শুধু মামলায় সাক্ষী হিসেবে জড়িয়েছে বলে দাবি করেন জসিম। সাক্ষী হিসেবে থাকা নৌ পুলিশের কনস্টেবল মো. আব্দুল জলিল গতকাল আজাদীকে বলেন, আমরা সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে মালামালগুলো জব্দ করে নিয়ে আসি। এসময় মালামালের সাথে কোনো লোকজনকে পাওয়া যায়নি কিংবা কোনো আসামির ব্যাপারে তিনি কোনো তথ্য দেননি বলে জানান তিনি। আব্দুল জলিল বলেন, আমরা শুধুমাত্র মালামাল জব্দ করে নিয়ে আসি। ওই অভিযান চালিয়েছিল পুলিশের আরেকটি টিম।
এদিকে মামলার এজাহারে থাকা দুই আসামি দাবি করেছেন– তাদেরকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে।