দেশের মানুষ নৌকাকে ‘ভয় পায় বুঝতে পেরেই’ আওয়ামী লীগ এবার উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক রাখেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, যে দেশে ভোট নাই, ভোটে অংশগ্রহণ করার কোনো সুযোগ নাই, যেখানে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নাই, যেখানে কোনো পার্টিসিপেশন নাই, সেখানে আবার কিসের ভোট? গতকাল বুধবার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল–জেএসডি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আমীর খসরুর এ মন্তব্য আসে।
তিনি বলেন, এই যে উপজেলা নির্বাচন, এটা দেশের মানুষকে আরেকটা ধাপ্পাবাজির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এটা ভোটের নামে ভাওতাবাজি। ভোট বলে কিছু নাই এই এদেশে। একটা ভোটচুরি প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্ত জাতিকে আজকে তারা (সরকার) জিম্মি করে রেখেছে। খবর বিডিনিউজের।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৮ মে ১৫০ উপজেলায়, দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে ১৬১ উপজেলায়, তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলা পরিষদে ২৯ মে ভোট হবে। আর চতুর্থ ধাপের ভোট হওয়ার কথা ৫ জুন। আইনে দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ভোট করার সুযোগ থাকলেও স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বা মনোনয়ন না দেওয়ার কথা আগেই জানিয়ে রেখেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্বাচন করতে হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। অন্যদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি উপজেলা নির্বাচনও না করার ঘোষণা দিয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেওয়া ওই সিদ্ধান্ত মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
সে প্রসঙ্গ ধরে আমীর খসরু বলেন, ৯৫ শতাংশ মানুষ ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে (দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন) ভোটকেন্দ্রে যায়নি। এবার সেই চিন্তা থেকে সরকার ভোটারদের আনতে নতুন কৌশল নিয়েছে। এবার তারা চিন্তা করেছে যে, মানুষ নৌকাকে ভয় পায়, নৌকার কথা শুনলে বোধহয় ভোট কেন্দ্রে যাবে না। সেজন্য নির্বাচনে তারা এবার দলীয় প্রতীক বাদ দিয়ে দিয়েছে। অথচ তারাই স্থানীয় সরকার আইন করেছে নৌকা দিয়ে, অর্থাৎ দলীয় প্রতীক দিয়ে নির্বাচন করার জন্য। আইনটা কিন্তু বাতিল করেনি। আইন রেখে তারা এখন নৌকা প্রতীক নিয়ে জনগনের কাছে যাচ্ছে না। কারণ ওরা দেখছে, বাংলাদেশের জনগণ নৌকা যেখানে আছে তারা সেখানে নাই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, এই উপজেলা নির্বাচন আরেকটি ভাওতাবাজির নির্বাচন। ভোটচুরি প্রকল্পই তাদের ক্ষমতার উৎস, এই ভোটচুরির প্রকল্প তাদের ক্ষমতায় রাখার ব্যবস্থা করেছে। সরকারের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর ঐক্য ‘অটুট’ রয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু।
তিনি বলেন, আমাদের সুখবর হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ আজকে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। আমরা যারা বিরোধী দলে আছি, আমাদের ঐক্য অটুট আছে, বিএনপির ঐক্য অটুট আছে। এই ঐক্য ভাঙার চেষ্টায় কোনো কিছু বাকি নাই। টাকা–পয়সা থেকে ভয়ভীতি, জেল–জুলুম থেকে নিপীড়ন–নির্যাতন, সব চেষ্টা করা হয়েছে। বিরোধী দলের নেতা–কর্মীরা ধান ক্ষেতে ঘুমিয়েছে, বেড়ি বাঁধে ঘুমিয়েছে কিন্তু নেতা–কর্মী কমপ্রোমাইজ করেনি। ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রকাশের দিনকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে জেএসডির উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই আলোচনা সভা হয়।
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার আত্মপ্রকাশ করে। এর ধারাবাহিকতায় ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। ১০ এপ্রিল গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয় সেদিন। আলোচনা সভায় প্রজাতন্ত্র দিবসের দাবি উপস্থাপন করেন জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।
জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বলেন, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাদের এদেশে বসবাস করা সম্ভব নয়। এই খুনিদের, এই জুলুমবাজ, দখলদার সরকারকে বিতাড়িত না করতে পারলে এদেশ সাধারণ মানুষদের বসবাস কঠিন হয়ে পড়বে। এই দেশ আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন করেছিলাম এমন দৃশ্য, এমন পরিবেশ দেখার জন্য নয়। গণতন্ত্র থাকবে না– সেজন্য তো আমরা যুদ্ধ করিনি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না– সেজন্য তো আমরা যুদ্ধ করিনি। রব বলেন, এই কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না। আপনারা জেগে উঠুন। দেশকে বাঁচান, মানুষকে বাঁচান। এই গণতন্ত্র ফেরানোর লড়াইকে এগিয়ে নিন, এদেরকে পরাজিত করুন।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আজো মানুষের মধ্য বিক্ষোভের যে আগুন জ্বলছে, সেই আগুনকে ঠিকমত গুছিয়ে একটা দাবানল তৈরি না করলে বিক্ষোভে আন্দোলনে রূপান্তরিত করা সম্ভব নয়।
এটার জন্য কোনো হঠকারী কর্মসূচির কথা আমি তো বলবই না, কারণ হঠকারিতা কোনোদিন গণতন্ত্রের জন্য সুখকর হয় না, সফলতার দিকে নিয়ে যায় না। কিন্তু গঠনমূলকভাবে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। যত দেরি হবে তত আমাদের জন্য ক্ষতি হবে।
শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির তানিয়া রব, মোহাম্মদ সিরাজ মিয়া, কে এম জাবির বক্তব্য দেন।