মানুষের কান্না-হাসির অংশীদার হতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

বিএমএ দীর্ঘমেয়াদী কোর্সে কমিশন পেলেন ১০৩ ক্যাডেট

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য ‘সদা প্রস্তুত’ থাকার পাশপাশি সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্নার ‘সমান অংশীদার’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গতকাল (রোববার) ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির (বিএমএ) ৮১তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদী কোর্সের সমাপনীতে রাষ্ট্রপতি প্যারেড অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দিচ্ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিএমএর অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে উপরোক্ত আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে তোমরা নবীন ক্যাডেটদের হাতে দায়িত্ব পড়ল, যে তোমরা দেশমাতৃকার মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে। এ দায়িত্ব পালনে সব সময় সজাগ থাকতে হবে, প্রস্তুত থাকতে হবে। সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাই হবে তোমাদের একমাত্র পেশাগত ব্রত।’ সাথে সাথে এদেশের সন্তান হিসেবে এদেশের মানুষের পাশে থাকতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের সকল প্রয়োজনে তোমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের যে কোনো দুর্যোগ ও দুঃসময়ে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে, লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা। স্বাধীনতার চেতনাকে সব সময় সমুন্নত রাখতে হবে। এই আদর্শ নিয়েই নিজেদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ মেনে চলার উপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। কিন্তু কখনও আমরা যদি বহিঃশত্রু দ্বারা আক্রান্ত হই, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার সক্ষমতাও আমরা ইতিমধ্যে অর্জন করেছি।
দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ। এই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ, ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব। জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা পূরণ করব।
সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন নতুন পদাতিক ডিভিশন, ব্রিগেড, ইউনিট ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সার্বিক উন্নয়নের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও গ্রহণ করেছি। আধুনিক সব সরঞ্জাম সেনাবাহিনীতে সংযোজন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের সরকারের হাত ধরেই সেনাবাহিনীতে নারী কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্তের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিকে একটি অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের একাডেমিতে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির (বিএমএ) ৮১তম দীর্ঘমেয়াদী কোর্সের ফিসার ক্যাডেটদের কমিশনপ্রাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে এবার ১০৩ জন ক্যাডেট কমিশন লাভ করেছেন। এদের মধ্যে ৯৫ জন বাংলাদেশি, ৭ জন ফিলিস্তিনি এবং ১ জন শ্রীলংকান ক্যাডেট রয়েছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের মধ্যে ৮৮ জন পুরুষ ও ৭ জন মহিলা ক্যাডেট রযেছেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, এসবিপি, ওএসপি, এনডিইউ, পিএসসি, পিএইচডি কৃতী ক্যাডেটদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার আবদুল্লাহ আল ইসলাম ৮১তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদী কোর্সে সেরা চৌকস ক্যাডেট বিবেচিত হন এবং গৌরবমণ্ডিত ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন। কোম্পানি জুনিয়র আন্ডার অফিসার ইমরুল কায়েস সামরিক বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ‘সেনাবাহিনী প্রধান স্বর্ণপদক’ অর্জন করেন। প্যারেডে ক্যাডেটরা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার লক্ষ্যে শপথ গ্রহণ করেন এবং প্যারেড শেষে তাদের মাতা-পিতা ও অভিভাবকরা নবীন অফিসারদের আনুষ্ঠানিকভাবে র‌্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন।
বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র মেঙিকোর কমান্ডার অফ দ্যা মেঙিকান আর্মি ইউফেমিও আলবার্তো ইবাররা ফ্লোরস, কয়েকটি বিদেশি দূতাবাসের কূটনীতিক, সংসদ সদস্যবৃন্দ, উচ্চপদস্থ সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের পিতা-মাতা ও অভিভাবকরা বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তৃতীয়বার ভেটো দেয় রাশিয়া
পরবর্তী নিবন্ধসার্ভিস জেটিতে আসবে সুফল