মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে আরো আন্তরিক হতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ১০ ডিসেম্বর, ২০২০ at ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ

আজ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। ১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। ১৯৫০ সালে এই দিনটিকে জাতিসংঘ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। সেই থেকে বিশ্বজুড়ে এ দিনটি পালিত হচ্ছে।
আমরা জানি, বর্তমান সরকার মানবাধিকার রক্ষায় অত্যন্ত আন্তরিক। দেশে আইনের শাসন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। তবু দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সকলেই যে সন্তুষ্ট আছে, তা বলা যাবে না। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য। গত ২০ নভেম্বর দেশটির সরকারের প্রকাশিত এসংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এই উদ্বেগের কথা বলা হয়েছে। মানবাধিকার প্রতিবেদনে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে বিশ্বের ৩০টি দেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ইউরোপের দেশটি। বাংলাদেশে মানবাধিকারের সার্বিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশীয় দেশটিতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাসহ বিভিন্ন নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগের কথা বলা হয়।
প্রতিবেদনে স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশে কমপক্ষে ১৫৮টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্রমাগত কমছে। কোভিড-১৯ বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করায় ৩৮ জন সাংবাদিক এবং স্বাস্থ্যখাতে জড়িত পেশাজীবীসহ চার শতাধিক ব্যক্তিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক করা হয়েছে। প্রতিবেদনে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ ও বিরোধী দলীয় একজন প্রার্থীর ওপর হামলার কথা বলা হয়। তাছাড়া নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করায় দেশটিতে অবস্থিত যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোর সমালোচনা করেছে বাংলাদেশ সরকার বলে উল্লেখ করা হয়। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করা হলেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইন্টারনেট সেবা সীমিত করে দেওয়ায় সেখানে কোভিড-১৯ মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় জনস্বাস্থ্য ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানানো হয়।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে বড় দিক হচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সদস্যদের দ্বারা নাগরিকদের প্রাণহানি। এই সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রাণহানির সংখ্যা এখনো কমেনি। তবে মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘এখানে বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমতের জায়গা সংকুচিত হচ্ছে। আর গণতন্ত্র হলো পছন্দের স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা। জনপ্রতিনিধি পছন্দ করে নেয়ার স্বাধীনতাতো প্রশ্নবিদ্ধ।’ তিনি বলেন, ‘মেজর (অব.) সিনহা হত্যার পর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আমরা দেখছি না। এটা সরকারের সদিচ্ছার অনুধাবন বলেই মনে করতে চাই।’
এদিকে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম বলেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না।’ বাকস্বাধীনতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাকস্বাধীনতা যে নেই তা পুরোপুরি বলা যাবে না। তাহলে প্রতিবাদ সমাবেশ, র‌্যালি- এগুলো কীভাবে হচ্ছে?’ ‘আর্টিকেল ১৯’ এর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সাল বলেন, ‘এই প্রতিবেদনের সাথে আমি আরো যেটা যোগ করতে চাই তা হলো, বাংলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদী ও উগ্রবাদীদের অবস্থান আরো সংহত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশ্লেষণে আমরা দেখতে পাই সামপ্রদায়িকতা বাড়ছে।’
উল্লেখ্য, ব্রিটেনের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রণালয় গত জুলাই মাসে ২০১৯ সালের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ ৩০টি দেশকে চিহ্নিত করে তাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানায় দেশটি। সেই পর্যালোচনা অব্যাহত রেখে গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসের চিত্র তুলে ধরা হয় ২০ নভেম্বরের প্রতিবেদনে।
আমাদের বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এদেশের সংবিধান আছে, অপরাধ দমন করা ও সংঘটিত অপরাধের বিচার করার জন্য অনেক কঠোর আইন আছে, সক্রিয় আদালত আছে, অনেকগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আছে, বিশেষ আদালত আছে; পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি-সবই আছে। অর্থাৎ আইনের শাসন দ্বারা দেশ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা আছে। তারপরও যদি কখনো কোথাও মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন হয়, তাহলে তা হবে চরম দুঃখজনক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে