মানবপাচারে জড়িত বিদেশী দুই এয়ারলাইন্স

আজাদী অনলাইন | মঙ্গলবার , ১ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৬:১৪ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ থেকে মানবপাচারে দু’টি এয়ারলাইন্সের কর্মীদের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।
সিআইডির নেতৃত্বে থাকা অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান আজ মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন।
লিবিয়ায় মানবপাচার মামলার ছয় পলাতক আসামির সন্ধান চেয়ে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারির বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিডিনিউজ
মাহবুবুর রহমান বলেন, “মানবপাচারের তদন্তে নেমে এর সঙ্গে দু’টি এয়ারলাইন্সের কর্মীদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে সিআইডি। এয়ারলাইন্স দু’টির নাম প্রকাশ না করলেও সিআইডি প্রধান বলেছেন, সেগুলো বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি নয়। তদন্তে দেখা যায়, এ দু’টি এয়ারলাইন্স সিঙ্গেল টিকেটে লোক পাঠিয়েছে যা অন্যায়।… কোনো সেমিনারে, চিকিৎসা নিতে; এমনকি ভ্রমণে গেলেও কখনো সিঙ্গেল টিকেটে যাওয়ার কথা নয়।”
ঐ দু’টি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব তদন্তেও ‘বিষয়টি দেখতে পেয়েছে’ বলে জানান মাহবুবুর রহমান।
এ ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশনের কোনো দায় ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের যাওয়া এবং আসার দু’টি টিকেট দেখানো হয় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রিটার্ন টিকেটটি সঠিক নয়। এটা ঐ এয়ারলাইন্সের লোকজনও জানে এবং তারা জড়িত।”
ঐ দুই এয়ারলাইন্সের কয়েকজন কর্মকর্তাকে সিআইডি অফিসে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথাও সাংবাদিকদের বলেন পুলিশের এই অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ মে লিবিয়ার মিজদাহ শহরে ২৬ বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করে একদল মানব পাচারকারী ও তাদের স্বজনরা। ঐ ঘটনায় চার আফ্রিকান অভিবাসীও নিহত হন।
ঐ ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একজনের বরাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই সময় জানিয়েছিল, উন্নত জীবিকার সন্ধানে ইউরোপ যাওয়ার জন্য লিবিয়ায় দুর্গম পথ পাড়ি দিচ্ছিলেন ৩৮ বাংলাদেশী। বেনগাজি থেকে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে মানবপাচারকারীরা তাদের ত্রিপোলি নিয়ে যাচ্ছিল।
লিবিয়ার মিলিশিয়া বাহিনীর সাথে যোগসাজশে পাচারকারীরা মিজদাহ শহরে ঐ দলটিকে জিম্মি করে এবং আরও টাকা দাবি করে।
এ নিয়ে বচসার মধ্যে আফ্রিকার মূল পাচারকারীকে মেরে ফেলা হলে তার পরিবার এবং বাকি পাচারকারীরা এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ৩০ জনকে হত্যা করে, আহত হন আরও ১১ জন।
ঐ ঘটনার পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৬টি মামলা হয়েছে। মানবপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে দেড় শতাধিক লোককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
সেসব মামলার পলাতক ছয় আসামির সন্ধান চেয়ে দু’দিন আগে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করেছে বাংলাদেশ।
তারা হলেন ইকবাল জাফর, তানজিরুল, স্বপন, শাহাদাত হোসেন, নজরুল ইসলাম মোল্লা ও মিন্টু মিয়া।
তাদের মধ্যে নজরুলের বাড়ি মাদারীপুরে, শাহাদাতের ঠিকানা ঢাকায়। বাকি চারজনই কিশোরগঞ্জের বলে ইন্টারপোলের নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান বলেন, “২০১৯ সালের মে মাসের পর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৩৮ জন ভিকটিমকে উচ্চ বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। ইতালি ও স্পেনে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় লিবিয়ার বেনগাজিতে। ত্রিপোলির মিজদায় বাংলাদেশী মানব পাচারকারীদের সহায়তায় লিবিয়ার মাফিয়া গ্রুপ ভিকটিমদের অমানবিক নির্যাতন শুরু করে এবং মুক্তিপণ দাবি করে। তারপর ঐ হত্যাকাণ্ড ঘটে।”
লিবিয়ার ঐ ঘটনায় দায়ের হওয়া ২৬টি মামলার মধ্যে ২৫টির তদন্ত করছে সিআইডি। এসব মামলায় ২৯৯ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং ১৭১ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
মাহবুবুর রহমান বলেন, “এ পর্যন্ত তদন্তে ঘুরে ফিরে ইন্টারপোলে দেওয়া ছয়জনের নাম এসেছে। তাদের মধ্যে তানজিমুল ইতালিতে অবস্থান করছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। আর বাকিদের অবস্থান জানতে পারিনি বলেই ইন্টারপোলের সহযোগিতা চেয়েছি।”

পূর্ববর্তী নিবন্ধখাগড়াছড়িতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর অভিযোগ
পরবর্তী নিবন্ধসাজেকে ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে আহত পর্যটককে উদ্ধার করল পুলিশ