বিজয় দিবসের আনন্দ শেষ হলো। এবারের বিজয় দিবস প্রতিবছরের মতো সাধারণ ছিলনা, সুবর্ণজয়ন্তী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানের কারণে এবারের বিজয় দিবস বাঙালি জাতির জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে অনেক মানুষ প্রকাশ্যে শপথ করেছে। এই শপথে একজনের সাক্ষী আরেকজন। প্রত্যেকেই শপথ নিয়ে দেশ ও জাতির সাথে ওয়াদা বদ্ধ হয়েছে। যাঁদের ন্যূনতম নীতিবোধ আছে এতোবড় প্রতিশ্রুতি থেকে তাঁদের সরে আসার কোনো সুযোগ নেই। ওয়াদা তথা প্রতিজ্ঞা সৃষ্টির সঙ্গে হোক অথবা স্রষ্টার সঙ্গে হোক তা পূর্ণ করা আবশ্যক। প্রতিজ্ঞা রক্ষা এবং ভঙ্গের পেছনে নৈতিকতার বিষয়টিও জড়িত।
আমার কাছে এই শপথ খুব কঠিন মনে হয়েছে। আমি কি এই শপথের মূল্য দিতে পারবো ? অথবা শেষ পর্যন্ত এই শপথ রক্ষা করে যেতে পারবো? এই সব চিন্তা আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। কেননা আমি ইতিহাসের সাক্ষী হতে লোক দেখানো শপথে বিশ্বাসী নই। আমি শপথের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালনে বিশ্বাসী।
আমি শারীরিক অসুস্থতার কারণে সবার মতো খোলা মাঠে গিয়ে শপথ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। কিন্ত আমি টিভির পর্দা অন করে বসা থেকে দাঁড়িয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখে মুখে উচ্চারণ করে শপথ বাক্য পাঠ করেছি। আমার এই শপথে আমার স্ত্রী ছাড়া আর কেউ সাক্ষী নেই। আমি শপথ না করলেও কেউ জানতোনা। কিন্ত আমি ভেবেছি, এভাবে আমরা যদি একজন একজন করে বিরত থাকি তাহলে এই দেশে ভাল কিছু হবে না। আমি বাংলাদেশের একজন নাগরিক। এই দেশটা গড়ার দায়িত্ব আমারও। সেই বোধ থেকেই শপথ নেয়া।
শপথ অনুষ্ঠান শুরু হলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনতে শুনতে আমার নিজের সাথে আমার নিজেরই দ্বন্দ্ব শুরু হলো। একটা বিশেষ ভয়ও কাজ করছে। সেই শপথ আমি রক্ষা করতে পারবো কি-না। ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে একসময় শপথ বাক্য পাঠ শুরু হলো। নিমিষেই আমার সমস্ত ভয়, সংশয় ও দুঃশ্চিন্তা দূর হয়ে গেলো। আমার ভিতর থেকে কে যেনো আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলছে, ‘দাঁড়াও, দেশের জন্য শপথ করো’। তখন মনের অজান্তে কোন সময় যে দাঁড়িয়ে গেলাম নিজেও টের পেলামনা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখে মুখে বলতে শুরু করলাম ‘..আমরা ওয়াদা করছি যে শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না- দেশকে ভালোবাসবো, দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করবো। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসামপ্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ে তুলবো’।
শপথ বাক্যের মাঝে কিছু কঠিন বাস্তবতা লুকায়িত আছে। কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে, সেই চ্যালেঞ্জ নিতে আমরা আদৌও প্রস্তুত কী-না ? কিছুটা ত্যাগও স্বীকার করতে হবে তার জন্য কতোটা মানসিক প্রস্তুতি বা মানসিক শক্তি আমাদের রয়েছে? এগুলো এখন দেখার বিষয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বলে অন্যের দেখাদেখিতে শপথ করে যার যার ঘরে ফিরে গেলাম, দেশ ও জাতির প্রশ্নে আমাদের চেতনায় কোনো পরিবর্তন আসলোনা, আমাদের চরিত্র ও কর্মে শপথের কোনো প্রতিফলন ঘটলো না, তাহলে মিছেমিছি এই শপথ বৃথা।
অল্প কয়েকটি লাইনের এই শপথ বাক্যের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বপ্নের কথা উচ্চারিত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের একটি সুখী সমৃদ্ধশালী এবং উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশাও জড়িয়ে রয়েছে। সেই কারণে এই বাক্যগুলোর অর্থ সুগভীর। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যার যার অবস্থান থেকে এই বিশাল দায়িত্ব পালনের মানসিকতা আমাদের কতটুকু আছে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশ গড়ার যে শপথে আমাদের আবদ্ধ করেছেন নিঃসন্দেহে তিনি সেটা শুধু দেশের জন্য করেছেন। উনার গভীর দেশপ্রেমই উনাকে এটি করতে উৎসাহিত করেছে। উনার এই শপথ যদি অন্তত দেশের কিছু মানুষের অন্তর স্পর্শ করতে পারে তাহলে এই শপথের সার্থকতা আসবে।
আসুন-জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসামপ্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ে তুলতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমরা যে ওয়াদা করেছি তা যেন আমরা রক্ষা করি।