মাধ্যমিকে ভর্তি হতে পারে না ৪৬ হাজার শিক্ষার্থী

খাগড়াছড়ির দুর্গম গ্রামে স্কুল সংকট

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | বুধবার , ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংকটের কারণে ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। কোনো রকমে প্রাথমিকের গণ্ডি পার হলেও দুর্গম এলাকায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় ঝরে পড়ছে অনেক শিক্ষার্থী। এর সংখ্যা ৪৬ হাজারের বেশি। বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন এ কথা।
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলা সদর থেকে দুর্গম তৈকাথাং আশা হফুনং বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। যাতায়াতের জন্য একমাত্র রাস্তার অর্ধেক ইট সলিং। বাকিটা যেতে হয় পায়ে হেঁটে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পুষ্পলিকা ত্রিপুরা বলেন, আমাদের এখানে ব্যক্তি উদ্যোগে ২০০০ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখন ১ম থেকে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫২। বিদ্যালয়ে শিশুদের বসার বেঞ্চও নেই। ফ্লোরে বসে ওরা পড়াশুনা করে। শিশুরা
কোনো রকমে গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়াশুনা করতে পারলেও মাধ্যমিক স্কুল না থাকার কারণে পড়ালেখায় অগ্রসর হতে পারে না।
একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মমতা ত্রিপুরা বলেন, বাচ্চারা প্রাইমেরি পর্যন্ত পড়ালেখা করতে পারে। এরপর যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজন উপজেলা সদরে গিয়ে পড়াশুনা করে। কিন্তু বেশিরভাগই প্রাথমিকের গণ্ডিতে আটকে থাকে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাজেন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকার কারণে এখানকার শিক্ষার্থীরা ১৫ কিলোমিটার দূরের মাটিরাঙায় গিয়ে পড়ালেখা করতে পারে না। আমাদের তৈকাথাং মৌজায় প্রায় ৪শ পরিবারের বসবাস। গ্রামে প্রাথমিক পর্যন্ত পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
খাগড়াছড়ির প্রায় সব কয়টি দুর্গম এলাকার চিত্র একই। এই জেলায় ১২১টি মৌজায় গ্রামের সংখ্যা ১৩শ ৮৮। এসব গ্রামের মধ্যে অর্ধেকের বেশি রয়েছে দুর্গম পাহাড়ি গ্রামে।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১শ ২৯টি। এসব স্কুল মূলত জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন সদরে অবস্থিত। বিদ্যালয় সংকটের কারণে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রাথমিকের তুলনায় মাধ্যমিকে কমে আসছে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ৪শ ৯৩ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৯৮ হাজার ৪শ ৯১ জন। অথচ সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ৫২ হাজার। প্রাথমিক শেষ করলেও বিদ্যালয় সংকটের কারণে মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমেছে ৪৬ হাজারের বেশি।
দুর্গম এলাকায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম খীসা। সংকট নিরসনে স্থানীয়ভাবে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে পাঠদানের অনুমোদন, ভবন নির্মাণ, শিক্ষক নিয়োগসহ যাবতীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, বিদ্যালয় সংকটের কারণে আমাদের এখানে ড্রপআউট হচ্ছে। তবে দুর্গম এলাকায় প্রথম পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এরপর মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ সেখানে অবকাঠামোসহ যাবতীয় সহযোগিতা প্রদান করবে।
খাগড়াছড়ি শিক্ষা উন্নয়ন সংস্থার সংগঠক জয় ত্রিপুরা বলেন, বিভিন্ন এলাকায় আমরা জরিপ করে দেখেছি, দুর্গম এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংকট রয়েছে। এ কারণে স্থানীয়দের উদ্যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।
পাহাড়ের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ প্রকল্প নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। অবকাঠামো নির্মাণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব নেয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে দুর্গম পাহাড়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। জরিপ করে পাহাড়ের নিদিষ্ট দূরত্বে বিদ্যালয় স্থাপন করার জন্য জেলা পরিষদ ও উন্নয়ন বোর্ডকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগকে জরিপ করে বের করতে হবে, দুর্গম এলাকায় কী পরিমাণ বিদ্যালয়ের সংকট রয়েছে। তারা দুর্গম এলাকাগুলোতে বিশেষ দূরত্বে বিদ্যালয় স্থাপন করবে। এজন্য শুধুমাত্র পার্বত্য এলাকার জন্য একটা বিশেষ প্রকল্প নেয়া উচিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএশিয়া নিউজ নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান হলেন মাহফুজ আনাম
পরবর্তী নিবন্ধইসি গঠনে নতুন পথ বাতলে দিল ওয়ার্কার্স পার্টি