মাদক ও চোরাচালান রোধে জোরদার হবে অভিযান

আঞ্চলিক টাস্কফোর্স ও আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিভাগীয় কমিশনার

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৬ অক্টোবর, ২০২১ at ১০:২১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিভাগীয় আঞ্চলিক টাস্কফোর্স ও আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেছেন, অস্ত্র উদ্ধার, ইয়াবা ও গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক, চোরাচালান, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, ইভটিজিং, শ্লীলতাহানি, চুরি-ডাকাতি, জ্বালানি তেল পাচার ও চোরাচালান রোধে টাস্কফোর্স এবং মোবাইল কোর্ট অভিযান আরো জোরদার করা হবে। জেলা প্রশাসন, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। সামপ্রতিক সময়ে একটি মহল সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বিনষ্ট করতে সারা দেশে তৎপর রয়েছে। তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। দেশ-বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সবসময় সজাগ থাকতে হবে বলে উল্লেখ করে তিনি ভারতসহ কোনো দেশেরই কোনো অবৈধ পণ্য যাতে দেশে চোরাপথে প্রবেশ না করে সেজন্য সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
গতকাল সোমবার সার্কিট হাউজে বিভাগীয় আঞ্চলিক টাস্কফোর্স ও আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভার সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, মাদকের অভিশাপ থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে। তিনি আসন্ন ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। বিভাগীয় আঞ্চলিক টাস্কফোর্স ও আইন-শৃঙ্খলা কমিটির আওতাধীন চোরাচালান নিরোধ আঞ্চলিক টাস্কফোর্স সভা, বিভাগীয় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা, বিভাগীয় নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভা, বিভাগীয় জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন টাস্কফোর্স সভা, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় সভা, জেলা প্রশাসকদের সাথে সমন্বয় সভা ও বিভাগীয় রাজস্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন সভায় বিগত সভার সিদ্ধান্ত ও অগ্রগতি তুলে ধরেন বিভাগীয় কমিশনার অফিসের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোন্দকার ইখতিয়ার উদ্দিন মো. আরাফাত ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর হোসেন।
সভায় পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিভিন্ন অপরাধের কারণে মামলার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিকাংশ মামলা মাদক ও চোরাচালান সংক্রান্ত। মাদক ও চোরাচালান বিষয়ক ৬৫ হাজারের অধিক মামলা পেন্ডিং রয়েছে। এগুলো যথাসময়ে নিস্পত্তি না হওয়ার কারণে আদালতে মামলার জট দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। মামলাগুলো কি কারণে নিস্পত্তি হচ্ছেনা তার কারণ চিহ্নিত করে দ্রুত নিস্পত্তির জন্য আদালতের বিচারক, পিপি ও সংশ্লিষ্টদের আরও আন্তরিক হওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান। ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন মামলা জট কমাতে প্রয়োজনে মাদক ও চোরাচালান মামলাগুলো জেলা ভিত্তিক ভাগ করে স্পেশাল বা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিয়ে গেলে দ্রুত নিস্পত্তি সম্ভব হতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। সন্ত্রাস, দমন, চুরি-ডাকাতি রোধ ও অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো ঘটনাকে পুঁজি করে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে দেয়া হবে না। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশের সক্ষমতা রয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মোকাবেলায় পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।
সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দেশবিরোধী একটি চক্র সামপ্রদায়িক সমপ্রীতিতে আঘাত হানার চেষ্টা করেছিল। নগরীর সবচেয়ে বড় পূজা মণ্ডপ জেএমসেন হলের অদূরে একটি ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় জড়িতদের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকীদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ওই ঘটনায় নগরজুড়ে আতংক বিরাজ করার কথা উল্লেখ করে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি নষ্ট করতে একটি মহল ফেসবুকে গুজব ছড়াচ্ছে, ধর্মের দোহাই দিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কড়া নজরদারি রয়েছে বলেও পুলিশ কমিশনার উল্লেখ করেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পণ্য পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি আবদুল মান্নান বলেন, চট্টগ্রাম বিআরটিএ দুর্নীতি ও দালাল চক্রের আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করে ওখানে ঘুষ না দিলে কোনো সেবা মিলেনা। পরিবহণ মালিক-শ্রমিকেরা ব্যাংকে টাকা জমা সাপেক্ষে তাদের গাড়ির ডকুমেন্ট হালনাগাদ করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়। বিভাগীয় প্রশাসনের এ ধরনের নীতি-নির্ধারণী ও গুরুত্বপূর্ণ সভায় বিআরটিএর উপ-পরিচালক উপস্থিত না থাকায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি আসন্ন ইউপি নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বিজিবি ও র‌্যাব মোতায়েনের দাবি জানান।
সভাগুলোতে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, বিজিবির জোনাল কমান্ডার কর্নেল রাশেদ আকবর, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, কঙবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান, লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আখন্দ, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ, রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, ফেনীর জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদুল হাসান, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা, রেলওয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, কোস্টগার্ডের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন কাজী শাহ আলম, নৌ বাহিনীর নির্বাহী কর্মকর্তা লে. কমান্ডার আকিক আহমদ, আনসার ভিডিপির রেঞ্জ পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মজিবুর রহমান পাটওয়ারী, এনএসআইর অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ আলী হাওলাদার, এফবিসিসিআইর প্রতিনিধি মাহফুজুল হক শাহ, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফ্‌ফর আহমদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার একেএম আলাউদ্দিন, চোরাচালান নিরোধ ট্রাইবুন্যালের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট হরিপদ চক্রবর্তী প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভুয়া চিকিৎসক আটক
পরবর্তী নিবন্ধবাউল শিল্পী রিতা দেওয়ানের বিচার শুরুর আদেশ