ইয়াবার প্রবেশ বন্ধ হয়নি। স্থলপথ ও জলপথ – দুদিক থেকেই ইয়াবা আসছে। মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোর জরিপেও প্রথম স্থানে আছে ইয়াবায় আসক্তি। দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে হেরোইন। তবে প্রথম স্থানে অবস্থানকারী মরণ নেশা ইয়াবার সাথে তার যোজন ব্যবধান। মাদকাসক্তদের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ইয়াবাসেবী। তৃতীয় স্থানে আছে গাঁজা, চতুর্থ স্থানে ফেনসিডিল। বছর কয়েক ধরে ইয়াবা যেভাবে মহামারী রূপ নিয়েছে তাতে বিশেষজ্ঞদের মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের পাশাপাশি ইয়াবার কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ইয়াবা নিয়ে যারা ধরা পড়ছে তাদের প্রায় সকলেই ক্যারিয়ার। তাই ইয়াবার আগ্রাসন প্রতিরোধে অর্থলগ্নিকারীদের বিরুদ্ধে অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ বলেছেন, ইয়াবা ব্যবসায়ী, ইয়াবা চোরাচালানকারীরা জাতির শত্রু। ইয়াবা চোরাচালানে অর্থলগ্নিকারীদের আইনের আওতায় আনতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় চোরাচালানের কুফল নিয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে সকল বাহিনীর সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করেন প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তা। সিএমপি কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর বলেছেন, অপরাধের জনক মাদক। একে শক্তভাবে নির্মূল করে যুবসমাজ ও দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য সিএমপির অধীন এলাকায় মাদকে অর্থলগ্নিকারীদের শনাক্ত করতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলা পুলিশে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে। যৌথ কর্মপন্থা ঠিক করতে বিজিবির সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। চোরাচালান বন্ধে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, এক সময় বিভিন্ন রেল স্টেশন ও বস্তিকে ঘিরে হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিলের রমরমা হাট বসেছিল। এখন ইয়াবার সুবাদে মাদক বস্তির পাশাপাশি অভিজাত পাড়ার স্কুল–কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সাইবার ক্যাফে, ফাস্ট ফুড শপ, সেলুন, কফি হাউজসহ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা। সুদূর মিয়ানমার থেকে যেমন পাচার হয়ে আসছে, তেমনি নগরীতেই গড়ে ওঠেছে ইয়াবার কারখানা। প্রায় প্রতিটি পাড়া মহল্লায় এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইয়াবার জমজমাট ব্যবসা চলছে। বর্তমানে মানের দিক থেকে বিভিন্ন ধরনের ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে ইয়াবা আসক্তের মধ্যে দিনমজুর থেকে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান পর্যন্ত নানা শ্রেণীর মানুষের খোঁজ মিলছে।
অভিযোগ রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইয়াবার চালান ধরিয়ে দিতে সোর্স মানির পরিবর্তে আটককৃত ইয়াবার একটি অংশ দিয়ে দেয়। সেগুলো আবার সোর্স মারফত চলে যায় বিক্রেতাদের কাছে। আবার অসাধু কিছু পুলিশ কর্মকর্তা নিজেদের সুবিধামতো রুট বানিয়ে ইয়াবার চালান আটক করেন যা একটি নির্দিষ্ট সময় পর ইয়াবা সিন্ডিকেটের কাছেই বিক্রি করে দেয়া হয়।
মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র তরীর পরিচালনা পরিষদের সদস্য মো: লিটন বলেছেন, মাদকাসক্তদের মধ্যে ৬০ থেকে ৭০% ইয়াবাসেবীকে আমরা রোগী হিসেবে পাই। ২০০০ সালের দিকে ফেনসিডিল ও হেরোইনের প্রতি আসক্তি ছিল খুব বেশি। উদ্বেগের বিষয় হলো এর মধ্যে টিনএজার বেশি। ক্লাস নাইন টেনের ছেলে মেয়ে ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়ছে।
এদিকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর বুধবার চট্টগ্রাম আঞ্চলিক টাস্কফোর্সের সভায় ইয়াবা চোরাচালান প্রতিরোধে অর্থলগ্নিকারীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদের সভাপতিত্বে অনলাইন মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এই সভায় চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীরসহ প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ অংশ নেন।