মাতঙ্গিনী হাজরা : মানবতাবাদী নেত্রী

| বুধবার , ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ

মাতঙ্গিনী হাজরা একজন মানবতাবাদী ও গান্ধীবাদী নেত্রী। মাতৃভূমির মর্যাদা রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করেছেন বিপ্লবী এই নারী। তিনি উপনিবেশিক শাসনের কবলমুক্তির সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং মহাত্মা গান্ধীর অহিংস ধর্মমত অনুসরণ করেন। পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার তমলুক থানার অন্তর্গত হোগলা নামক গ্রামে ১৮৭০ সালের ১৭ নভেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় মাতঙ্গিনী হাজরার হাতেখড়ি হয়নি। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার পর আঠারো বছর বয়সে মাতঙ্গিনী নিঃসন্তান অবস্থায় বিধবা হন। তিনি উপনিবেশিক শাসনের কবলমুক্তির সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং মহাত্মা গান্ধীর অহিংস ধর্মমত অনুসরণ করেন। ব্রিটিশদের অন্যায় অত্যাচার তাঁকে ভীষণ পীড়িত করে। পরিণত বয়সে ব্রিটিশদের শাসন শোষণের প্রতি তীব্র ঘৃণা তাঁর মধ্যে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে তিনিও যোগ দেন। ১৯৩২ সালের ২৬ জানুয়ারি মেদিনীপুরের নেতারা জাতীয় পতাকা নিয়ে যে বিপ্লবী শোভাযাত্রা বের করে তাতে ৬২ বছর বয়েসী মাতঙ্গিনীও অংশ নেন। এরপর একে একে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিলে ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে দু’দফা গ্রেপ্তার করে। দ্বিতীয়বার তিনি বহরমপুর জেলে ছয় মাস বন্দী থাকেন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে। সে সময় কলেরা, বসন্ত প্রভৃতি রোগের প্রকোপ ছিল বেশি। বৃদ্ধ মাতঙ্গিনী হাজরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে এইসব রোগীর সেবাও করতেন। স্থানীয়দের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘গান্ধীবুড়ি’ নামে। ভারত ছাড় আন্দোলন (১৯৪২) চলাকালে মেদিনীপুরের জনগণ থানা, আদালত ও অন্যান্য সরকারি অফিস জোরপূর্বক দখল করার উদ্দেশ্যে আক্রমণের পরিকল্পনা করছিল। ওই সময় ৭২ বছর বয়সী মাতঙ্গিনী শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন। এ আন্দোলনে পুলিশের গুলি তাঁর বাহুতে আঘাত হানে। নির্ভীক মাতঙ্গিনী তাদের নিজেদের ভ্রাতৃবর্গের ওপর গুলি না চালানোর জন্য পুলিশের নিকট সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাতে থাকেন। এমনসময় বন্দুকের আরেকটি গুলি তাঁর কপাল ভেদ করে যায়।
এ নির্ভীক দেশপ্রেমিক মানবতাবাদী নেত্রী ১৯৪২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধপণ্যদ্রব্যের দিশেহারা দামে জীবনযাত্রার মান ব্যাহত