মাঠজুড়ে সোনালি ধানের ঘ্রাণ

গুমাইবিল

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | রবিবার , ১৪ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

ধানের ম-ম গন্ধে ভরে উঠছে ফসলের ক্ষেত। মাঠের পর মাঠজুড়ে সোনালি কাঁচা-পাকা ধানের ফসলি ক্ষেত যেন দিগন্ত ছুঁয়ে গেছে। শুরু হয়েছে ধান কাটা। এরপর মাড়াই আর ঘরে তোলার মহোৎসব। গতকাল শনিবার বিকালে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল রাঙ্গুনিয়ার গুমাইবিলে এমন চিত্র দেখা গেছে। কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়ার মরিয়মনগর চৌমুহনীর পরেই চোখে পড়বে চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার খ্যাত গুমাইবিল। উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলি, মরিয়মনগর, হোসনাবাদ, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এই গুমাইবিল। এই বিলে এবার ৩ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে আমনের চাষাবাদ হয়েছে। মাঠজুড়ে এখন কৃষকের ফলানো সোনালি ধানের ছড়াছড়ি। দিগন্তজোড়া মাঠ সেজেছে যেন হলুদ-সবুজ রঙে। বিলের কোথাও ধান কাটা শুরু হয়েছে, কোথাও আবার ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছে কৃষক। সপ্তাহ ব্যবধানে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে বলে জানায় কৃষকরা। বরাবরের ন্যায় এবারো বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করছেন তারা। তবে ধানের ন্যায্য মূল্যে যেন নিশ্চিত করা হয়, সেই দাবি কৃষকের। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ায় আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার ২৫৫ হেক্টর। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ১৫ হাজার ৩২০ হেক্টর। এরমধ্যে গুমাইবিলে চাষাবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে। আবাদ হওয়া ধানের মধ্যে এবার মোট উফশী ধানের চাষ হয়েছে উপজেলায় ১৫ হাজার ১০ হেক্টর, স্থানীয় জাত ২২০ হেক্টর এবং ৯০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের আবাদ হয়েছে। আবাদ করা ধানের মধ্যে ফলনের লক্ষ্যমাত্রা হেক্টর প্রতি ধানে ৫.৭ মেট্রিক টন এবং চাউলে ৩.৭৬ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ফলনও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
মো. মোকাররম নামে এক কৃষক জানান, তিনি ৬ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করেছেন। ইতোমধ্যেই তার ধান পেকেছে এবং কিছু কিছু ধান কেটে ঘরেও তুলেছেন। এতে তার হেক্টর প্রতি ৬ মেট্রিক টনের মতো ফলন হয়েছে বলে তিনি জানান। গুমাইবিলের অপর কৃষক নূর উদ্দিন জানান, তিনি ৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করেছেন। তার হেক্টর প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। যেখানে তার ফলন হয়েছে প্রতি হেক্টরে ৬০০ আড়ি (১০ কেজিতে এক আড়ি) করে। বাজারে এখন আড়ি প্রতি ২০০ টাকা হারে ধান বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান। এই হিসেবে তিনি প্রতি হেক্টরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার ধান বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করেন। গুমাইবিলের একাংশের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি অফিসার উত্তম কুমার জানান, ধানের ভালো ফলন হয়েছে। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিলো না। কৃষি অফিসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে যথাযথ পরিচর্যাসহ সময়মতো সার ব্যবহারে বাম্পার ফসল উৎপাদিত হবে বলে আশা করছি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কারিমা আক্তার বলেন, রাঙ্গুনিয়ার কৃষকের ঘাম ঝরানো ফসল ঘরে তুলে আনতে এখন প্রস্তুত। কোনো কোনো কৃষকের ঘরে আমন ধান উঠতে শুরু করেছে। ফলন গতবারের চেয়ে ভালো হয়েছে। গতবার সরকারি খাদ্য গুদামে প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা হারে কৃষকরা বিক্রি করেছিল। এবার এখনো সিদ্ধান্ত হয় নি। তবে আশা করি কৃষকরা ভালো দামে তাদের ধান বিক্রি করতে পারবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমহানবীর জীবনী পড়ে মুসলিম হলেন স্পাস্কা
পরবর্তী নিবন্ধডিসেম্বরের মধ্যে সড়কে ভোগান্তি কমানোর আশা চসিকের