মাইক্রো আরএনএ আবিষ্কার এবং জিনের অভিব্যক্তি নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকার ওপর আলো ফেলার স্বীকৃতিতে দুই গবেষক পেলেন চিকিৎসায় নোবেল। সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট গতকাল সোমবার এবারের বিজয়ী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের দুই গবেষক ভিক্টর অ্যাম্ব্রস ও গ্যারি রাভকুনের নাম ঘোষণা করে। নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য বাবদ ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার ভাগ করে নেবেন তারা। নোবেল কমিটি বলেছে, পৃথিবীতে
জটিল জীবনের কীভাবে সূচনা হয়েছে এবং বিচিত্র রকমের টিস্যু দিয়ে মানবশরীর কীভাবে গঠিত হয়েছে, সে বিষয়টিই ব্যাখ্যা করার পথ খুলেছে ভিক্টর অ্যাম্ব্রস ও গ্যারি রাভকুনের গবেষণায়। প্রাণীদেহে জিনগুলো কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় তার ওপর মাইক্রো আরএনএর প্রভাব রয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
কোষে জেনেটিক তথ্য লিপিবদ্ধ থাতে ডিএনএর মধ্যে। কিন্তু একইরকম জেনেটিক তথ্য থাকার পরও মানবদেহের কোষগুলোর গঠন ও ক্রিয়াকলাপে ব্যাপকভাবে আলাদা। যেমন স্নায়ু কোষের তড়িৎ সিগন্যাল হৃদকোষের স্বাভাবিক স্পন্দন থেকে আলাদা। যকৃতের কোষ কিডনির কোষ থেকে আলাদা, দুটি অঙ্গের কাজও আলাদা। আবার চোখের রেটিনার কোষের আলো বোঝার সক্ষমতা শ্বেত রক্তকণিকার অ্যান্টিবডি তৈরির কার্যক্রম থেকেও আলাদা।
জিনের গঠনগত একইরকম বৈশিষ্ট্য বা উপাদান থাকার পরও এত বৈচিত্র্য হয় জিনের অভিব্যক্তির কারণে। মার্কিন দুই বিজ্ঞানী প্রথমবারের মতো এই মাইক্রো আরএনএর উপস্থিতির বিষয়টি তুলে ধরেন, যা জিনের অভিব্যক্তি বুঝতে সাহায্য করে। জীবের বিভিন্ন কোষে জিনের বিভিন্ন রকমের অভিব্যক্তির ওপর এই মাইক্রো আরএনএর নিয়ন্ত্রক ভূমিকার ওপর আলো ফেলেছেন তারা।
সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের নোবেল অ্যাসেম্বলি বলেছে, জিন নিয়ন্ত্রণের সম্পূর্ণ নতুন মূলনীতি প্রকাশ করেছে দুই বিজ্ঞানীর গবেষণা, যা মানুষসহ বহুকোষী জীবের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এখন সবাই জানে, এক হাজারের বেশি মাইক্রো আরএনএর কারণে মানব জিনোম আলাদা আলাদা অভিব্যক্তি প্রকাশ করে।
জিনের অভিব্যক্তি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা না থাকলে জীবের প্রতিটি কোষ হতো একইরকম। ফলে জীবের জটিল জীবন বিবর্তন বুঝতে সাহায্য করবে মাইক্রো আরএনএ। আবার মাইক্রো আরএনএর অস্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ ক্যান্সার ঘটাতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে জন্মগতভাবে শ্রবণশক্তি হারানো ও হাড়ের সমস্যার মতন জটিলতাও ঘটতে পারে। যেমন ডিআইসিইআর১ সিন্ড্রোম; এতে বিভিন্ন কোষের মধ্যে ক্যান্সার হতে পারে। ডিআইসিইআর১ জিনে মিউটেশনের কারণে দুর্লভ, জন্মগত সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয়, যা মাইক্রো আরএনএসগুলোকে আক্রান্ত বা প্রভাবিত করে।
গত বছর চিকিৎসায় নোবেল পেয়েছিলেন হাঙ্গেরিয়ান–আমেরিকান বায়োকেমিস্ট কাতালিন কারিকো এবং মার্কিন চিকিৎসক ড্রিউ ওয়াইসম্যান। তাদের গবেষণার মধ্য দিয়ে এমআরএনএ ভ্যাকসিন তৈরির পথ সুগম হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করা কোভিড মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এমআরএনএ ভ্যাকসিন।
চিকিৎসা শাস্ত্রের পুরস্কার ঘোষণার মধ্য দিয়েই এবারের নোবেল পর্ব শুরু হল। আজ মঙ্গলবার পদার্থবিদ্যা, বুধবার রসায়ন, বৃহস্পতিবার সাহিত্য এবং শুক্রবার শান্তিতে পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। সবশেষ ১৪ অক্টোবর অর্থনীতি ক্যাটাগরিতে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করবে নোবেল কমিটি।