চট্টগ্রামে কিছুদিন আগে শেষ হয়েছে বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট। আর সে টুর্নামেন্টের মেয়েদের বিভাগে যেসব ফুটবলার খেলেছে তাদের সবাই এসেছিল বিভিন্ন গ্রাম থেকে। মুলত গ্রামগঞ্জ থেকে উঠে আসা মেয়েরাই মাঠ মাতিয়েছে। টুর্নামেন্ট চলাকালে দেকা গেছে শহরের দল গড়তেও গ্রামের মেয়েদের সাহায্য নিতে হয়েছে। আর সেই গ্রামে যারা এইসব মেয়েদের গড়ে তোলেন তারা কিন্তু কখনোই বড় মাপের কোন ফুটবলার ছিলেননা। কিন্তু নিজের দায়িত্ববোধ থেকে তারা লড়াই করে যাচ্ছেন মেয়েদের ফুটবলের প্রতি আগ্রহী করতে। তেমনই একজন বাঁশখালীর মোহাম্মদ এরশাদ। তিনি নিজে চট্টগ্রামে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে ক্রিকেট খেললেও একেবারে কৌতুহল বশে মেয়েদের ফুটবলে আনার কাজটা শুরু করেন। এখন সেটা তার কাছে কঠিন লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। ২০১৯ সালে পার্শ্ববর্তি আনোয়ারায় কিছু উৎসাহী মেয়েদের নিয়ে শুরু করেন নিলুফার কায়সার মহিলা ফুটবল একাডেমি। আর এ কাজে তাকে সহায়তা করেন আবাহনীর সাবেক কৃতি ফুটবলার মোঃ আলি। আর সে বছরই বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে আনোয়ারা উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার হয়ে একাডেমির সকল ছাত্রীর সমন্বয়ে গঠিত টিম চ্যাম্পিয়ন হয়। সে দলের মেয়েরা জায়গা করে নেয় চট্টগ্রাম জেলা দলে। দলের দুজন মেয়ে ভর্তির সুযোগ পায় বিকেএসপিতে। এ বছর সে একাডেমির মেয়েদের নিয়ে গড়া দল বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়নও হয়েছে।
পরবর্তীতে নিজ উপজেলা বাঁশখালীতে বেশ কয়েকজন মেয়েকে নিয়ে গঠন করেন একাডেমির আরেকটি শাখা। এখন তার একাডেমিতে প্রায় ৪৫ জনের মত মেয়ে অনুশীলন করে। যাদের অনেকেই একেবারে নতুনভাবে শুরু করেছে ফুটবল অনুশীলন। ধীরে ধীরে মেয়েদের গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন এরশাদ। যদিও কাজটা বেশ কঠিন। কারণ অনেক মেয়েকে দূর থেকে আসতে হয়। অনেকের আবার গাড়িভাড়াও থাকেনা। অনেককেই আবার পরিবার আসতে দিতে চায়না। তাই নানা ঝুঁকি নিয়ে মেয়েদের আনতে হয় অনুশীলনে। তবে এরশাদ তৃপ্তি পান যখন দেখেন তার একাডেমির মেয়েরা খেলেন বিভিন্ন দলে এবং জেলার হয়ে। বাঁশখালীর বাহারছড়ার রত্নপুর হাই স্কুল মাঠে সপ্তাহে তিনদিন মেয়েদের অনুশীলন করানো হয়। এরশাদ চেষ্টা করেন মেয়েদের ফুটবলে ধরে রাখতে। যদিও অনেক সময় সেটা সম্ভব হয়না। নানা সময় পরিবার থেকে বাধা আসে। আবার যখন দেখে কোন মেয়ে ভাল করেছে তখন অভিভাবকরা রাজি হয় তাদের মেয়েদের ফুটবলে পাঠাতে। তবে হাল ছাড়েন না এরশাদ। নানাজনকে সাথে নিয়ে চেষ্টা করছেন মেয়েদের ফুটবলে রাখতে।
যেহেতু এখন মেয়েদের নানা ফুটবল টুর্নামেন্ট হয় তাই মেয়েদের খেলার সুযোগও বেড়েছে। তবে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মেয়েদের ফুটবলে ধরে রাখা। আর সে কঠিন লড়াইটি করে যাচ্ছে এরশাদ।












