মহাসড়কে নতুন যন্ত্রণা নিত্য যানজট

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৩ মার্চ, ২০২১ at ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার আউটার রিং রোড কিংবা চারশ’ কোটি টাকার ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোডের সুফল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবে ভেস্তে যেতে বসেছে। প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে থাকছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট এলাকায়। বন্দর টোল রোড, আউটার রিং রোড এবং ফৌজদারহাট বায়েজিদ বাইপাস রোডের শত শত গাড়ি পারাপারে সুষ্ঠু কোনো ব্যবস্থাপনা না থাকায় ভয়াবহ রকমের বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। এতে ফৌজদারহাট এলাকায় তিনটি রোডের মিলনস্থল ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ‘নতুন দুশ্চিন্তা’ হয়ে উঠেছে।
সরজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, পতেঙ্গা থেকে আসা আউটার রিং রোড সাগরিকা এলাকায় বন্দর টোল রোডের সাথে মিলিত হয়ে ফৌজদারহাটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যুক্ত হয়েছে। এতে পতেঙ্গা থেকে যে কোনো গাড়ি আউটার রিং রোড ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পৌঁছতে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট সময় লাগছে। অপরদিকে বায়েজিদ বোস্তামি থেকে বাইপাস সড়ক ফৌজদারহাটের প্রায় একই জায়গায় গিয়ে যুক্ত হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে। এই রাস্তা ধরে শহরের যে কোনো স্থান থেকে একটি গাড়ি ফৌজদারহাট হয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে পৌঁছতে সময় লাগছে ১০ মিনিট থেকে আধাঘণ্টা। মাত্র ৩০ মিনিট সময়ে শাহ আমানত সেতু থেকে ফৌজদারহাটে পৌঁছানোর সুযোগ হয়েছে নগরীর ফ্লাইওভার এবং বাইপাস রোডের মাধ্যমে। অথচ ফৌজদারহাট পৌঁছে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের নাগাল পেতেই দীর্ঘ সময় আটকে থাকতে হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, টোল রোড এবং বাইপাস রোডে চলাচলকারী শত শত গাড়ির জটলায় এলাকাটিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে থাকছে।
দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট ওভারব্রিজ সংলগ্ন সংক্রমক ব্যাধি হাসপাতালের পাশ দিয়ে পশ্চিম দিক থেকে এসে যুক্ত হয়েছে টোল রোড। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে আসা শত শত কন্টেনার মোভারসহ কয়েক হাজার বন্দর এবং পতেঙ্গামুখী গাড়ি টোল রোডে উঠার জন্য ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক ক্রস করতে হয়। রাস্তার বাম পাশ থেকে ডান পাশে যাওয়ার সময় ঢাকা চট্টগ্রাম রোডে চলাচলকারী সব গাড়ি বন্ধ করে রাখতে হয়। অপরদিকে বায়েজিদ বাইপাস রোড ধরে ঢাকামুখী গাড়িগুলোকে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠে বামে ওভারব্রিজ পার হয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার এসে এমপি বাড়ির সামনে দিয়ে ঘুরে বাম পাশ থেকে ডান পাশে যায়। আবার অনেকগুলো গাড়ি বাইপাস থেকে বের হয়ে রং সাইড ধরে ঢাকা চট্টগ্রাম রোড ক্রস করে। এতে টোল রোড এবং বাইপাস রোডের গাড়ি একই মোড় দিয়ে ক্রস করার ফলে ভয়াবহ জটলার সৃষ্টি হয়। অপরদিকে আইন মেনে এমপির বাড়ির সামনে থেকে ঘুরে যাওয়া গাড়ি এবং ট্রাংক রোডের গাড়ি ওই জটলায় পড়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ করে তোলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওই মোড়টিতে বাইপাস রোড এবং টোল রোডের গাড়ি যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনা করা না হলে দিনে দিনে এই জটলা ঢাকার সায়দাবাদের জটলাকেও হার মানাবে। এক্ষেত্রে রাস্তার ডিভাইডারে কিছুটা পরিবর্তন এনে বাইপাসের গাড়ির বাড়তি ঘোরা বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়িয়ে রং সাইডে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করলেও কিছুটা সুফল আসবে। টোল রোডমুখী গাড়ি মহাসড়ক ক্রস করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান সিস্টেমের পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন কোনো বিকল্প তৈরি করা না গেলে ভবিষ্যতে ভোগান্তি আরো বাড়বে বলে সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ভোগান্তি দিনে দিনে বাড়ছে। এখানে ওভারপাস নির্মাণ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
বিষয়টি নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশ বিষয়টি দেখবে। রাস্তায় যানজটের নতুন একটি পয়েন্ট তৈরি হয়েছে। এটি আমাদের একটি বড় দুশ্চিন্তা। পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তাদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
জেলা ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা সকাল থেকে গভীর রাত অব্দি যানজট সামলানোর চেষ্টা করছি। আসলে এখানে ডিজাইনটি যেন একটু অন্যরকম হয়ে গেছে। প্রতিদিন জটলা সামলাতে আমাদের ট্রাফিক সদস্যদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ফৌজদারহাট বাইপাস রোড এবং আউটার রিং রোড নির্মাণ করেছে সিডিএ। টোল রোড বন্দরের। সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস বলেছেন, এই জটলার ব্যাপারে আমরা নতুন করে চিন্তাভাবনা করছি। সড়ক ও জনপথ বিভাগ টোল রোড সম্প্রসারণ করছে। আমরা আউটার রিং রোড সাগরপাড় দিয়ে সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া পর্যন্ত নিয়ে যাবো। ফৌজদারহাটে যেই জটলা তৈরি হয়েছে তা সামলানোর জন্য ওভারপাস নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
সিডিএ কিংবা সড়ক ও জনপথ বিভাগের পরিকল্পনাকে সময়সাপেক্ষ বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জরুরিভিত্তিতে কিছু একটা পথ বের করার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তারা বলেছেন, বিদ্যমান জটলা দ্রুত নিরসন করা না গেলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে সড়ক নির্মাণের মূল উদ্দেশ্যই ভেস্তে যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুড়ল সাড়ে ৯ হাজার ঘর-দোকান
পরবর্তী নিবন্ধকাস্টমস রাসায়নিক ল্যাবে নমুনা জট