মহামারীকালে ৮ হাজার ১৮৭ ব্যক্তির দাফন সৎকারে সহায়তা দিয়েছে গাউসিয়া কমিটি

সংবাদ সম্মেলনে তথ্য

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১০ মার্চ, ২০২২ at ৭:৩৪ পূর্বাহ্ণ

করোনা মহামারির এই দুই বছরে গাউসিয়া কমিটি সারাদেশে ৮ হাজার ১৮৭ জন মৃত ব্যক্তির দাফন-সৎকারে সহায়তা দিয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামের ছিল ৫ হাজার ৪২ জন। এছাড়া ৫৪ জন হিন্দু, ৮ জন বৌদ্ধ, একজন মারমা উপজাতি এবং এক জন খ্রিস্টানসহ ৬৪ জনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সহায়তা দেয়া হয়। এদের মধ্যে ৫৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ৫৪ জন অজ্ঞাত লাশ, ৫ জন কয়েদি ছিলেন।
গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে করোনা মহামারির দুই বছর পূর্তিতে আয়োজিত মানবতার সেবায় গাউসিয়া কমিটির অবদান-শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান করোনায় মৃতের কাফন-দাফন, রোগী সেবা কর্মসূচির প্রধান সমন্বয়ক ও গাউসিয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, দাফন সৎকার ছাড়াও গাউছিয়া কমিটি মানবিক টিমের পক্ষ থেকে সাতটি অ্যাম্বুলেন্সে ৯ হাজার ৩১১ রোগী পরিবহন ছাড়াও অক্সিজেন সেবা দেওয়া হয় ৩৮ হাজার ২০৯ রোগীকে। এছাড়া মাত্র ১০০ টাকা সরকারি ফিতে ভ্রাম্যমাণ কোভিড টেস্ট সুবিধা পান ৫ হাজার ৮৯৩ জন। ২১ হাজার ২৯২ মানুষকে ফ্রি ওষুধ এবং চিকিৎসা দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, দুই দফা লকডাউনে মোট আড়াই লাখ পরিবারকে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হয় এই সময়ে। গত মাসে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া অডিটরিয়ামে গাউসিয়া কমিটির সহায়তায় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ২৩ হাজারের অধিক ছাত্র-ছাত্রীকে করোনা টিকা দেয়া হয়। বর্তমানে প্রান্তিক ভাসমান মানুষের মাঝে করোনার গণটিকা কার্যক্রমে সহয়তা দেয়া চলমান। গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের এসব সেবার জন্য ভুক্তভোগী সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে কোনো রকম খরচ বা ফি নিই না।
মোছাহেব উদ্দিন বখতিযার বলেন, করোনা মহামারীতে গাউসিয়া কমিটির কর্মীরা যেকোনা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দুর্যোগে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম। আমাদের কর্মীরা ইতোমধ্যে ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আগুন নিভিয়েছে। এমনকি সমুদ্রে ভেসে আসা লাশ উদ্ধারেও পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সাথে কাজ করেছে। আমরা পুলিশের অনুরোধে এ পর্যন্ত ৫৪ জন অজ্ঞাত এবং পচা গলা বিকৃত লাশের গোসল ও কাফন সম্পন্ন করেছি। তাই সরকার ও সংশিষ্ট প্রশাসন গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের এই মানবিক কর্মীদের এখন থেকে যে কোনো সরকারি কাজে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে বলে ঘোষণা দেন। গাউসিয়া কমিটিকে জাতীয়ভাবে সম্মাননা জ্ঞাপন করলে কাজের উৎসাহ আরো বড়বে বলে আমরা মনে করি।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি রাখা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্পটে মৃতের জন্য স্থায়ী গোসল কাফন ঘর তৈরি করার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সকল হাসপাতালে মৃত ব্যক্তির গোসলের সুবিধা রাখা, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের নতুন আবিষ্কার ‘মৃতের ভ্রাম্যমান গোসলখানা’ অবলম্বনে সরকারি ও বেসরকারি বড় হাসপাতালগুলোতে ভ্রাম্যমাণ গোসলখানা তৈরীর পদক্ষেপ নেয়া, বড় হাসপাতালগুলোতে অন্তত দীর্ঘদিন লাশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকা এব্‌ং একটি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য আনজুমান-এ রাহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট ও গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশকে জমি বরাদ্দসহ সরকারের সার্বিক সহায়তা দেয়া।
গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ কমিশনারের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব শাহাজাদ ইবনে দিদার, যুগ্ম মহসচিব মাহবুবুল হক খান, মহানগরের সহসভাপতি ছাবের আহমদ, উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক হাবিব উল্লাহ মাস্টার, গাউসিয়া কমিটি কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেল প্রধান অধ্যক্ষ আবু তালেব বেলাল, করোনা মৃতের কাফন দাফন এবং রোগী সেবা কর্মসূচির সদস্য আহসান হাবীব চৌধুরী হাসান, সদস্য এরশাদ খতিবীসহ প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে স্ক্র্যাপ লোহা চুরি, দুজন গ্রেপ্তার, ট্রাক জব্দ
পরবর্তী নিবন্ধইউএনওর গাড়িতে ইটবাহী ট্রাকের ধাক্কা ।। অল্পের জন্যে রক্ষা